চৌবাচ্চায় মুক্তোচাষের গবেষণা করে ‘পদ্মশ্রী’ ডঃ সোনকার

মুক্তা— প্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয়দের অন্যতম অলঙ্কার এই রত্নটি। অবশ্য ঝিনুকের বুক থেকে পাওয়া এই পাথরটিকে রত্ন বলতে রাজি নন অনেকেই। তবে তার মূল্য সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে ছবিটা। চিরাচরিত রীতিতে মুক্তা চাষে আর তেমন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রাকৃতিকভাবে সমুদ্রের জলে বেশিরভাগ ঝিনুকের শরীরেই আর মুক্তা পাওয়া যাচ্ছে না। আর এই পরিস্থিতিতেই এক বিকল্প পথের হদিশ দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের বিজ্ঞানী ডঃ অজয় কুমার সোনকার (Ajay Kumar Sonkar)। সমুদ্রের জলে নয়, বরং স্বাদু জলেই ঝিনুক চাষের উপায় বের করেছেন তিনি। আর খুব সহজেই ঘরের মধ্যে চৌবাচ্চা তৈরি করে সেখানে ঝিনুক চাষ এবং মুক্তা (Pearl) সংগ্রহ করতে পারবেন তাঁরা। ডঃ সোনকারের দীর্ঘদিনের এই গবেষণার স্বীকৃতি হিসাবে চলতি বছর পদ্মশ্রী পুরস্কার পেলেন তিনি।

উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের বাসিন্দা অজয় সোনকার। ছোটো থেকেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। সেই উদ্দেশ্যেই এলাহাবাদ ইউনিভার্সিটিতে গাণিতিক বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। তবে এই সময়েই দূরদর্শনের একটি অনুষ্ঠান তাঁর সমস্ত পরিকল্পনা বদলে দেয়। সেই অনুষ্ঠানে দেখানো হয়েছিল, জাপানে কীভাবে চৌবাচ্চার মধ্যে ঝিনুক চাষ করা হয়। অবশ্য জাপানে কোনোদিনই খুব বেশি মুক্তা পাওয়া যায় না। সেই তুলনায় ভারতে মুক্তার চাষ বরাবরই বেশি। তবুও সময়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ভারত পিছিয়ে পড়ছিল। অজয় ঠিক করলেন, ভারতেও আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মুক্তা চাষ শুরু করবেন তিনি। শুরু হল প্রস্তুতি। প্রথমেই চৌবাচ্চার স্বাদু জলে কালো মুক্তা চাষ করে চমকে দিলেন সকলকে। আর ১৯৯৩ সালে বিশ্বের প্রথম মুক্তা চাষ সম্মেলনেও আমন্ত্রন পান তিনি।

ডঃ সোনকারের মতে, জাপানের আবহাওয়া মুক্তা চাষের পক্ষে অনুকূল নয়। সেখানে একটি মুক্তা তৈরি হতে অন্তত ২.৫-৩ বছর সময় লাগে। সেখানে ভারতের আবহাওয়ায় ৬ মাসের মধ্যেই মুক্তা তৈরি করা যায়। গত ৩ দশক ধরে এই কাজটাই করে চলেছেন তিনি। প্রথমে আন্দামানে একটি ফার্ম তৈরি করেছিলেন। তবে এখন আন্দামানের ফার্মের দেখাশোনা সেখানকার কর্মচারীরাই করেন। ডঃ সোনকার তাঁর প্রয়াগরাজের পরীক্ষাগারে বসে গবেষণা চালান। দ্রুত মুক্তা উৎপাদনের পাশাপাশি ঝিনুকের জিন নিয়ে আরও নানা ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে আসছেন তিনি। এর মধ্যে এমন একটি ঝিনুক নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন, যেটি জল থেকে প্লাস্টিকের মতো দূষক সরিয়ে দিতে পারে।

ডঃ সোনকারের গবেষণার প্রশংসা করেছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞানী এপিজে আব্দুল কালামও। আর গত অক্টোবরে তাঁকে রাষ্ট্রপতি ভবনে নিমন্ত্রন জানান রামনাথ কোবিন্দ। তখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল কথাবার্তা। অবশেষে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে শেষ মুহূর্তে ঘোষণা করা হল নাম। আর প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন তাঁর হাতে পদ্মশ্রী পুরস্কার তুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি।

আরও পড়ুন
দেশের দ্বিতীয় রূপান্তরকামী হিসাবে পদ্মশ্রী পেলেন কর্ণাটকের যোগাপ্পা নৃত্যশিল্পী

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কবর থেকে ফিরে এসে পদ্মশ্রী, গুলাবু সাপেরার কাহিনি হার মানায় সিনেমাকেও