ফিরে দেখা ২০২১ : চলে গেলেন যেসব স্বনামধন্য বাঙালি (দ্বিতীয় পর্ব)

/১১

শেষ হতে চলেছে আরও একটি বছর। হাসি-কান্নার ভেলায় ভাসানো ২০২১ সাল। এই এক বছরে যেমন অনেককিছু পেয়েছি, তেমনই হারিয়েছি অনেককে। অতিমারী করোনার প্রকোপ তো চলেছেই। বছর শেষে ফিরে দেখা যাক সেইসব কিংবদন্তি বাঙালিদের, গত এক বছরে যাঁরা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। প্রহরের পাতায় থাকল তাঁদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা।

/১১

দীপক মুখোপাধ্যায় (২২ জুলাই) – বাংলা নাটকের জগতে তিনি ছিলেন আলোর জাদুকর। ১৯৭৩ সালে চেতনা নাট্যদলের ‘মারীচ সংবাদ’ নাটক থেকে আলোকসজ্জার কাজ শুরু। অবশ্য তার আগে, ১৯৫৮ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে হাওড়া গণনাট্য সংঘের হাত ধরে শুরু হয়েছিল মঞ্চাভিনয়। পরে অবশ্য নেপথ্যেই থেকেছেন সবসময়। নাটকের মঞ্চের উইং থেকে আলো ফেলার পদ্ধতিও আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। ‘জগন্নাথ’, ‘রোশন’, ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’, ‘মেফিস্টো’, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ সহ অসংখ্য নাটক প্রাণ পেয়েছে তাঁর আলোকসজ্জায়। বার্ধক্যজনিত কারণেই চলে গেলেন দীপক মুখোপাধ্যায়।

/১১

গৌরী ঘোষ (২৬ আগস্ট) – বাংলা আবৃত্তিশিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে অন্যতম পার্থ ঘোষ-গৌরী ঘোষ জুটি। একসঙ্গে আকাশবাণীতে রেডিও উপস্থাপক হিসাবে যাত্রা শুরু করেন তাঁরা। এরপর একে একে বেরোতে থাকে তাঁদের আবৃত্তির রেকর্ডিং। ৫ দশক ধরে শিল্পের জগতকে ঋদ্ধ করেছেন তিনি। আধুনিক বাচিকশিল্পীদের কাছে গৌরী ঘোষ ছিলেন মায়ের মতো। চলতি বছরেই সবকিছু ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন তিনি।

/১১

বুদ্ধদেব গুহ (২৯ আগস্ট) – ছোটোবেলায় ঋজুদার অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি হোক, বা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘একটু উষ্ণতার জন্য’, ‘নগ্ন নির্জন’, ‘সুখের কাছে’ – বুদ্ধদেব গুহর সূত্রেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে এই প্রজন্মের অনেকের। অরণ্যজীবন এবং নিসর্গ বর্ণনা ছিল তাঁর লেখার অন্যতম বিষয়। পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার, শরৎ পুরস্কার। চলতি বছরেই কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তবে সংক্রমণ থেকে সেরেও উঠেছিলেন। শেষ পর্যন্ত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল তাঁর।

/১১

স্বপনকুমার চক্রবর্তী (২৫ সেপ্টেম্বর) – মূলত ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হলেও স্বপনকুমার চক্রবর্তীর মূল পরিচয় একজন চিন্তাবিদ হিসাবে। টমাস মিডলটনের নাটকের সঙ্গে যেমন বহু বাঙালি পাঠকের পরিচয় ঘটিয়েছেন, তেমনই বাঙালির মুদ্রণ সংস্কৃতির ইতিহাস নিয়েও দীর্ঘ গবেষণা করেছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের কিউরেটর হিসাবেও কাজ করেছেন। শেষদিকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিশতবার্ষিকী সংগ্রহশালা নির্মাণের কাজ সামলেছেন। কোভিড সংক্রমণ থেকে সেরে উঠলেও ততদিনে তাঁর ফুসফুস অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চলে গেলেন স্বপনকুমার চক্রবর্তী।

/১১

নৃপেন গঙ্গোপাধ্যায় (২৪ অক্টোবর) – সত্যজিতের পর বার্লিনজয়ী দ্বিতীয় বাঙালি পরিচালক তিনি। স্বাধীনতার পর ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওতে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ শুরু। এরপর বেশ কিছু পরিচালকের সহকারী হিসাবেও কাজ করেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন সিনে টেকনিশিয়ান আন্দোলনের। ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় তাঁর স্বতন্ত্র পরিচালনার প্রথম ছবি ‘শেষ প্রহর’। ‘ভোম্বল সর্দার’ ছবির জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবেও যায় সিনেমাটি। বার্ধক্যজনিত কারণেই মৃত্যু হয় নৃপেন গঙ্গোপাধ্যায়ের।

/১১

সুব্রত মুখোপাধ্যায় (৪ নভেম্বর) – বঙ্গ রাজনীতিতে তিন মুখ সোমেন মিত্র, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বাকি দুজনের মৃত্যু হয়েছে আগেই। চলতি বছরেই চলে গেলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও। মাত্র ২৩ বছর বয়সে মন্ত্রীসভায় জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন কলকাতার মেয়রের পদও সামলেছেন। শেষ দিকে রাজ্যের শিল্প দপ্তরের মন্ত্রিত্ব সামলেছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

/১১

হাসান আজিজুল হক (১৫ নভেম্বর) – ‘আগুন পাখি’-র লেখক হিসাবেই তাঁকে মূলত চেনেন এপাড় বাংলার পাঠকরা। বাংলা গদ্যসাহিত্যের জগতে তিনি একটি স্বতন্ত্র ধারার কাণ্ডারি। শুধুমাত্র লেখার কাঠামোগত পরীক্ষানিরীক্ষায় বিশ্বাসী ছিলেন না হাসান আজিজুল। বরং বিষয়বস্তু থেকেই গড়ে উঠত তাঁর গদ্যের কাঠামো। তাঁর অধিকাংশ রচনাতেই ক্ষয়িষ্ণু সমাজের মধ্যে থেকে উত্তরনের স্বপ্নও দেখিয়েছেন হাসান আজিজুল।

/১১

চণ্ডীদাস মাল (৮ ডিসেম্বর) – বাংলা পুরাতনী গানের শিল্পীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। শ্যামাসঙ্গীত থেকে শুরু করে টপ্পা গানে তাঁর ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য। কৈশোরে যাত্রাদলের গান দিয়ে পেশাপ্রবেশ চণ্ডীদাস মালের। এরপর আকাশবাণীতে নিয়মিত নানা অনুষ্ঠান করেছেন। তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন অজয় চক্রবর্তী, ড. উৎপলা গোস্বামী, তিমিরবরণ ঘোষ, চন্দ্রবলী রুদ্র দত্ত, লোপামুদ্রা, ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। চলতি বছরেই বিদায় নিলেন চণ্ডীদাস।

১০/১১

অজিত রায় (২০ ডিসেম্বর) – বাংলা সাহিত্যে অজিত রায় ছিলেন এক ব্যতিক্রমী সাহিত্যিক। ‘যোজন ভাইরাস’ বা ‘জোখিম কোরকাপ’ উপন্যাসে মানব মনস্তত্ত্বের নানা জটিলতাকে নিয়ে খেলা করেছেন অনায়াসে। উপন্যাসের পাশাপাশি নানা গবেষণাধর্মী কাজও করেছেন। ‘বাংলা স্ল্যাং’ বা ‘যৌনতা সমুচ্চয় তত্ত্বতালাস’ এর মধ্যে অন্যতম। আকস্মিকভাবেই সাহিত্যের জগত ছেড়ে বিদায় নেন অজিত রায়।

১১/১১

শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় (২০ ডিসেম্বর) – বাংলা কবিতায় ‘কৃত্তিবাস’ যুগের অন্যতম কবি ছিলেন তিনি। কবি নরেন্দ্র দেবের ‘পাঠশালা’ পত্রিকায় কবিতা লেখার শুরু। পরে বুদ্ধদেব বসুর ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। কৃত্তিবাস গোষ্ঠীর কাছে ছিলেন অভিভাবকের মতো। কবিতা লিখেছেন নমিতা মুখোপাধ্যায় ছদ্মনামেও। বার্ধক্যজনিত কারণেই মৃত্যু হল তাঁর।

Powered by Froala Editor

Latest News See More