তাঁর শেষ লেখা বই ‘লেটস অল মেক দ্যা ডে কাউন্ট’ অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাবে এখনও ঘরে ঘরে হতাশা প্রবণ মানুষদের; শুনিয়ে যাবে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ফেরার গল্প। আর প্রতিবার তাঁর গান শুনে, তাঁর লেখা পড়ে নিজের সঙ্গে এক একটা যুদ্ধে যখন জিতে যাব আমরা, ঠিক তখনই হয়তো মেঘলা আকাশ জুড়ে রামধনু উঠবে একটা। রামধনু উঠবে ঠিক সেই রকম, যেমন ভেসে উঠেছিল চার্লি ড্যানিয়েলের শেষকৃত্যের সময় ন্যাশভিল শহরের মাউন্ট জুলিয়েটের গা ঘেঁষে।
কান্ট্রি মিউজিক বা লোকসঙ্গীতের ‘হল অফ ফেম’-এ জায়গা করে নেওয়া চার্লি ড্যানিয়েলস গত ৬ জুলাই মারা গেলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের ন্যাশভিল শহরেরই একটি নার্সিং হোমে। আচমকা স্ট্রোক হয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ন্যাশভিল হসপিটালে তরফে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। এতটাই গভীর প্রভাব ছিল ড্যানিয়েলসের, টেনেসির গভর্নর বিল লির সিদ্ধান্তে, চার্লি ড্যানিয়েলের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে এবং তাঁর অনুরাগীদের প্রতি সহমর্মিতায়, অর্ধনমিত রাখা হয় টেনেসির নির্দিষ্ট পতাকা।
ড্যানিয়েলসের জন্ম যদিও টেনেসির পূর্ব দিকের রাজ্য নর্থ ক্যারোলিনায়। যদিও পরবর্তীতে থিতু হন টেনেসির অন্তর্গত ন্যাশভিলেই। সেই টেনেসি, যার উত্তরে কেন্টাকি, উত্তর-পূর্বে ভার্জিনিয়া, পূর্বে নর্থ ক্যারোলিনা এবং দক্ষিনে মিসিসিপি, অ্যালাবামা এবং জর্জিয়া। সেই জর্জিয়াকে নিয়েই ড্যানিয়েলস গান বেঁধে ফেলেছিলেন, ‘দ্য ডেভিল ওয়েন্ট ডাউন টু জর্জিয়া’। ডি মাইনরে বাঁধা এই গানের জন্যই ১৯৭৯ সালে গ্র্যামি পুরস্কার লাভ করেন তিনি। আমেরিকার অন্যতম ক্লাসিক এবং কাল্ট সঙ্গীতে পরিণত হয় ‘দ্য ডেভিল ওয়েন্ট ডাউন জর্জিয়া’।
‘চার্লি ড্যানিয়েলস ব্যান্ড’ নামের গানের দলে গান লেখা, সুর করা, বেহালা বাজানো সব রকম কাজেই পারদর্শী ছিলেন তিনি। যদিও অসাধারণ বেহালা বাদক হিসেবেই তাঁকে মনে রাখবে সঙ্গীত দুনিয়া। দেশ-বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল চার্লি ড্যানিয়েলের গানের দল। কখনও কখনও সারাবছরে ২৫০টিরও বেশি অনুষ্ঠান করতেন তাঁরা।
তাঁর গানে ফুটে উঠত তীব্র দেশাত্মবোধ, ধর্মের প্রতি আনুগত্য এবং চারপাশের প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা। দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে হোয়াইট হাউস, সুপার বোল এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা সেনাবাহিনীর সমাবেশেও গান শুনিয়েছেন তিনি। গান গাওয়ার জন্য সবথেকে প্রিয় জায়গা কোনটি? জিজ্ঞেস করলে একমুখ সাদা গোঁফ-দাড়ির হাসিখুশি মানুষটি উত্তর দিয়েছিলেন, “যে কোনো জায়গা, যেখানে মানুষ গান শুনতে চাইবে এবং মোটামুটি আমি অল্পস্বল্প কিছু পারিশ্রমিকও পেয়ে যাব!”
যদিও গোঁড়া দেশাত্মবোধের কারণেই অনেক সময়ে বিতর্কিত চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন ড্যানিয়েলস। আমেরিকা বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন বলে তাঁর মনে হওয়ায় তিনি সমালোচনা করতে ছাড়েননি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামারও। সম্প্রতি আমেরিকায় কালো মানুষের প্রতি অত্যাচারের প্রতিবাদে দেশজুড়ে প্রবল বিক্ষোভের শামিল হওয়া মানুষদেরও বিরুদ্ধাচারণ করেছিলেন তিনি। যদিও এই সব বিতর্ক ভুলে পরবর্তীতে হয়তো থেকে যাবে চার্লি ড্যানিয়েলসের সুর এবং বেহালা বাজিয়ে গেয়ে চলা তাঁর অসাধারণ কান্ট্রি সংগীতগুলিই।
আরও পড়ুন
কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদ, দীর্ঘ আটবছর পর নতুন অ্যালবাম নিয়ে আসছেন বব ডিলান
Powered by Froala Editor