Powered by Froala Editor
চলতি বছরে শতবর্ষ পূর্ণ করবেন যে-সকল বাঙালি নক্ষত্র
১/১১
দোরগোড়ায় হাজির আরও একটা নতুন বছর। বদলে গেলে ক্যালেন্ডারের পাতা। নতুন বছরে পা দিয়ে, ফিরে দেখা যাক সেইসব বাঙালি কিংবদন্তিকে, চলতি বছরে শতবর্ষ পূর্ণ করবেন যাঁরা। যাঁদের হাত ধরেই মঞ্চ পেয়েছে বাংলার শিল্প-সংস্কৃতি, বিজ্ঞানচর্চা তথা জাতিসত্তা।
২/১১
অবন্তীকুমার সান্যাল (৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৩)— জন্ম ফরিদপুরে। তবে পড়াশোনার সূত্রেই ১৯৩৯ সালে চলে আসেন কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর লাভের পর অধ্যাপনা শুরু করেন বর্ধমান রাজ কলেজে। সেইসঙ্গেই চলেছে বাংলা ও ফরাসি সাহিত্য নিয়ে গবেষণা। তাঁর গবেষণার অন্যতম বিষয় ছিল রোমাঁ রলাঁ। একাধিক ফরাসি গ্রন্থের অনুবাদকও তিনি। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের গদ্যরীতি ও ভারতীয় কাব্যতত্ত্বের ওপরেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে অবন্তীকুমারের।
৩/১১
মীরা মুখোপাধ্যায় (১১ মে, ১৯২৩)— অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’-এর হাত ধরেই শিল্পকলার জগতে হাতেখড়ি হয়েছিল মীরার। পরবর্তীতে বার্লিনে থেকে টনি স্ট্যাডলার ও হেনরিচ কারচনারের মতো খ্যাতনামা শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন বাঙালি ভাস্কর। ভারতে ফেরার পর ছত্তিশগড়ের ঐতিহ্যবাহী বাস্তার ভাস্কর্য, ব্রোঞ্জ কাস্টিং, আয়রন কাস্টিং-এর ওপরেও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন মীরা। ভাস্কর্যের দুনিয়ায় অনন্য অবদানের জন্য, ১৯৯২ সালে পদ্ম পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন তিনি।
৪/১১
মৃণাল সেন (১৪ মে, ১৯২৩)— তাঁকে ছাড়া অসম্পূর্ণই থেকে যায় বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস। সত্যজিৎ, ঋত্বিক-এর মতো তিনিও ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম এক স্তম্ভ। ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘পদাতিক’ কিংবা ‘ভুবন সোম’-এর মতো ছবি দেখলেই বুঝতে পারা যায় মৃণাল সেনের জীবন দর্শনকে। চলচ্চিত্রের মধ্যে দিয়ে পার্থিব জীবনকেই বেশি করে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন কিংবদন্তি বাঙালি পরিচালক। ঝুলিতে রয়েছে একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার। পেয়েছেন পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে সম্মাননাও।
৫/১১
রণজিৎ গুহ (২৩ মে, ১৯২৩)— ১৯৮০ সাল। এক নতুন তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন এক বাঙালি ইতিহাসবিদ। তাঁর কথায়, চিরকাল ইতিহাস প্রাধান্য দেয় বিত্তশালীদের। পরিবর্তে নিম্নবর্গের ইতিহাস ও জীবনচর্চার ওপরেই জোর দিয়েছিলেন তিনি। আজ যা পরিচিত সাবঅল্টার্ন স্টাডিজ নামে। রণজিৎ গুহ। শুধু কলকাতা কিংবা ভারতই নয়, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন-সহ একাধিক দেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন কিংবদন্তি ইতিহাসবিদ। জড়িত ছিলেন বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গেও।
৬/১১
বিশ্বময় বিশ্বাস (২ জুন, ১৯২৩)— বাবা ছিলেন ভূতত্ত্ববিদ্যার অধ্যাপক। প্রত্যাশা ছিল, বিষয় হিসাবে তাঁর সন্তানও বেছে নেবেন ভূতত্ত্ববিদ্যাকেই। তবে বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে জুলজি নিয়েই পড়াশোনা শুরু করেন বিশ্বময়। পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন ভারতের অন্যতম পক্ষীবিদ। নেপাল ও উত্তর-পূর্ব ভারতের পাখি প্রজাতির উপর বিস্তারিত কাজ রয়েছে বিশ্বময় বিশ্বাসের। পেয়েছিলেন অর্নিথোলজিস্ট ইউনিয়ন পুরস্কার থেকে শুরু করে চ্যাপম্যান মেডেল। দায়িত্ব সামলেছেন জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ারও। পরবর্তীতে তাঁর নামে নামকরণ করা হয় একটি উড়ুক্কা কাঠবিড়ালি প্রজাতিরও।
৭/১১
গৌর কিশোর ঘোষ (২০ জুন, ১৯২৩)— দারিদ্রের কারণে স্কুলে পড়ার সময়ই ছাড়তে হয়েছিল পড়াশোনা। তারপর কখনও কাজ করেছেন গৃহশিক্ষক হিসাবে, কখনও আবার তাঁকে দেখা গেছে ওয়েটার, নাবিক কিংবা ইলেকট্রিশিয়ানের ভূমিকায়। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময় দৈনিক সত্যযুগ পত্রিকায় ইনটার্ন হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে সাংবাদিকতাই হয়ে ওঠে তাঁর পেশা। কাজ করেছেন সাপ্তাহিক দেশ-এ। সম্পাদনা করেছেন আনন্দবাজার পত্রিকার। ইমার্জেন্সির পর তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আরেক দৈনিক সংবাদপত্র ‘আজকাল’।
৮/১১
সুমিত্রা দেবী (২২ জুলাই, ১৯২৩)— চল্লিশ এবং পঞ্চাশের দশকে বাংলা থেকে উঠে আসা চলচ্চিত্র তারকাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। অপূর্ব মিত্রের ছবি ‘সন্ধি’-তে তাঁর অভিষেক হয় ১৯৪৪ সালে। দেখা গিয়েছিল ‘দেবী চৌধুরানী’, ‘পথের দাবি’, ‘দস্যু মোহন’-এর মতো ছবিতে। তবে শুধু বাংলাই নয়, একইসঙ্গে একাধিক হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। পেয়েছেন বিএফজে পুরস্কার। ১৯৯০ সালে ৬৭ বছর বয়সে প্রয়াত হন সুমিত্রা।
৯/১১
শিবদাস ঘোষ (৫ আগস্ট, ১৯২৩)— ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অতি স্বল্পচর্চিত একটি নাম শিবদাস। মাত্র ১৩ বছর বয়সে অনুশীলন সমিতিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে হয়ে উঠেছিলেন রিভোলিউশনারি সোশালিস্ট পার্টি বা আরএসপি-র সদস্য। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনেরও অন্যতম শরিক ছিলেন শিবদাস। ঢাকায় জন্ম হলেও, দেশভাগের পর চলে আসেন ভারতে। করেছিলেন বামপন্থী সংগঠন এসইউসিআই। ১৯৭৬ সালে প্রয়াত হন শিবদাস।
১০/১১
অমলকুমার রায়চৌধুরী (১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯২৩)— কালজয়ী পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং এবং ২০২০-র নোবেলজয়ী রজার পেনরোজ ছিলেন তাঁর কৃষ্ণগহ্বর-সংক্রান্ত গবেষণার সঙ্গী। পেনরোজ-হকিং থিওরেম তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল অমলকুমারের। আপেক্ষিকতাবাদের ক্ষেত্রে তাঁর তৈরি সমীকরণ অবশ্যপাঠ্য গবেষকদের। এমনকি ‘রয়চৌধুরী ইক্যুয়েশন’-এর ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী পেনরোজ তৈরি করেছিলেন সিঙ্গেলপ্যারিটি থিওরেম। ভারতে ফিরে অধ্যাপনা করেছেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। ২০০৫ সালে ৮১ বছর বয়সে প্রয়াত হন কিংবদন্তি বাঙালি পদার্থবিদ।
১১/১১
শোভা সেন (১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯২৩)— অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরের এক ডাক্তার পরিবারে জন্ম। তবে কলকাতাই হয়ে উঠেছিল তাঁর দাঁড়াবার জায়গা। বেথুন কলেজ থেকে পাশ করার পর, জড়িয়ে পড়েন ভারতীয় গণনাট্য সংঘে। বিজন ভট্টাচার্যের ‘নবান্ন’-তেই অভিষেক হয় তাঁর। পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন ভারতীয় নাট্য আন্দোলনের অন্যতম শরিক। শুধু থিয়েটারই নয়, একাধিক চলচ্চিত্রেও দেখা গেছে উৎপল-সহধর্মিণী শোভা সেনকে।