৩৬/১ সাউথ এন্ড পার্ক, কলকাতা- ২৯। ঠিকানায় গেলে চোখে পড়বে একটি জরাজীর্ণ বাড়ি। বেশ পুরনোই হবে। সামনে থাকা ফলকের দিকে চোখ পড়লে পরক্ষণেই বোঝা যাবে বাড়িটির মাহাত্ম্য। একসময় এখানেই যে সপরিবারে থাকতেন শচীন দেব বর্মন। আর এখানেই বেড়ে ওঠা টুবলুর। যাবতীয় দৌরাত্ম্যের পাশাপাশি চলছিল পড়াশোনা, সঙ্গে সঙ্গীত শিক্ষা, তবলা, সরোদের তালিম। শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিল ব্রজেন বিশ্বাস, উস্তাদ আলাউদ্দিন খানের মতো ব্যক্তিদের। অবশ্য টুবলুর আরও একটি ডাকনাম আছে। সেই নামেই বিখ্যাত তিনি। গোটা বিশ্ব যাকে চেনে ‘পঞ্চম’ নামে।
কলকাতাতেই জন্ম। এখানেই বেড়ে ওঠা। পরবর্তীকালে মুম্বই এবং অন্যান্য জায়গায় গেলেও, রাহুল দেব বর্মনের মন পড়ে থাকত এই শহরে। এই বাড়িতেই উঠতেন। মনে-প্রাণে তিনি যে খাঁটি বাঙালি। তবে শুধু সাউথ এন্ড পার্কের বাড়িটিই নয়। ১৯৪৮ সালে এখানে আসার আগে হিন্দুস্তান পার্কের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন শচীন কত্তারা। সেই বাড়িতেই জন্ম রাহুল দেব বর্মনের।
বাবা-মা মুম্বই চলে গেলে কলকাতায় দিদিমাকে নিয়ে থাকতেন পঞ্চম। সেখান থেকে বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুল, তীর্থপতি ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা। পরে সঙ্গীত জগতে ঢুকে যাওয়ার পর, বলা ভাল মহীরুহ হয়ে যাওয়ার পরও ভোলেননি কলকাতাকে, বাংলাকে। মুম্বইয়ে বলিউডের পাশাপাশি সমানভাবে গান তৈরি করেছেন বাংলায়। সুর দিয়েছেন, গেয়েছেন। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তাঁর অবদান নিয়ে নতুন করে আলোচনার কিছু নেই অবশ্য। বিলিতি সুরের প্রভাবের পাশাপাশি ভারতের, বাংলার নিজস্ব সুরও কি ছিল না? আজও তর্ক জমাই আমরা।
এই বাংলা থেকেই তিনি পেয়েছিলেন ঊষা উত্থুপকে। পার্ক স্ট্রিটের ‘ট্রিঙ্কাস’ রেস্তোরাঁ থেকে পেয়েছিলেন বিখ্যাত জ্যাজ শিল্পী লুইস ব্যাঙ্কস’কে। আর নিজে তো ছিলেনই। পরে অবশ্য প্রাণের বাড়িটিও বিক্রি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর নিজের স্মৃতি, বাবার স্মৃতি সব জড়িয়ে রয়েছে এখানে। তবে সেই বাড়ির অবস্থাও কহতব্য নয়। জরাজীর্ণ বাড়িটিকে হেরিটেজ হিসেবে ২০০৬ সালে অধিগ্রহণ করে সরকার। ভেঙে ফেলার হাত থেকে বাঁচে সেটি। তবে তার থেকে বেশি নয় কিছুই। আজও নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে সেটি। মহানগরী কলকাতায়। ধ্বংসের অপেক্ষা? কে জানে!