সেটা একটা অস্থির সময়। গোটা বিশ্বের দখলদারির জন্য লড়াই চালাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিগুলো। হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে পাঠানো হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে। কাতারে কাতারে লোক মরছে পোকামাকড়ের মতো। হ্যাঁ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (World War II) কথাই হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ তরুণের মতোই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (USA) মেরিনের হয়ে সেই অগ্নিগর্ভ রণক্ষেত্রে নেমে পড়েছিলেন ওহায়োর ১৯ বছর বয়সী কিশোর হ্যারল্ড হেডেন। না, আর ফেরা হয়নি তাঁর। এমনকি নিখোঁজ ছিল তাঁর দেহাংশটুকুও। প্রায় ৭৮ বছর পর এবার সন্ধান মিলল হেডেনের সমাধির।
মেরিন কর্পসের ডিফেন্স অ্যাকাউন্টিং এজেন্সির নথি অনুযায়ী ১৯৪৩ সালের ২২ নভেম্বর প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রে পা দিয়েছিলেন হেডেন। তাঁকে পাঠানো হয়েছিল তারাওয়ার যুদ্ধে। যুদ্ধের তৃতীয় দিনেই নিহত হন তিনি। কিন্তু বাড়িতে মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছালেও, বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফিরত আসেনি তাঁর মরদেহ। তারাওয়াতেই কোনো কবরস্থানে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়েছে এমনটাই ধরে নিয়েছিল তাঁর পরিবার।
কিন্তু সেই ধারণাতেও ফাটল ধরে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর। ১৯৪৬ সালে গ্রেভস রেজিস্ট্রেশন কোম্পানি দেশে ফেরায় তারাওয়া থেকে পাওয়া সমস্ত মার্কিন সৈন্যদের দেহাবশেষ। যোগ্য সম্মান দিয়ে তাঁদের পুনর্সমাধিস্থ করা হয় সেনা-সমাধিস্থলে। কিন্তু সেই তালিকাতে ছিল না হেডেনের দেহ। শুধু হেডেনই নয়, তারাওয়াতে শহিদ হওয়া সেনার প্রায় অর্ধেকেরই দেহাংশের সন্ধান পাওয়া যায়নি সেই সময়। ১৯৪৯ সালে আরও একটি অভিযান চালানো হয় ওই অঞ্চলে। সেবারেও হেডেনের দেহ না পাওয়া যাওয়ায় তাঁর পাশে বসে ‘নিখোঁজ’ তকমা।
এর পর কেটে গিয়েছিল প্রায় ৬ দশক। ২০০৯ সালে হিস্ট্রি ফ্লাইট ইনকর্পোরেটেড নামের একটি অলাভজনক সংস্থা গবেষণার জন্যই অনুসন্ধানে নেমেছিলেন তারাওয়ার বেটিও দ্বীপে। প্রত্নসামগ্রীর সন্ধানে শুরু হয়েছিল খননকার্য। আর সেই খননেই মাটির তলা থেকে বেরিয়ে আসে আস্ত একটি সমাধিক্ষেত্র। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে এই সমাধিক্ষেত্র থেকে পাওয়া দেহাবশেষগুলি পাঠানো হয়েছিল পার্ল হার্বারের ল্যাবরেটরিতে। দাঁত এবং ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে চলেছিল চিহ্নিতকরণের চেষ্টা। সম্প্রতি, সেই সূত্র ধরেই খুঁজে পাওয়া যায় হেডেনের উত্তরসূরিদের। পাশাপাশি মৃতদেহের সঙ্গে খুঁজে পাওয়া বেশ কিছু ব্যক্তিগত সামগ্রী থেকেও প্রমাণিত হয় হেডেনের পরিচয়।
আরও পড়ুন
নাৎসিদের হাতে লুঠ হয়েছিল বিশ্বযুদ্ধে, নিলামে ভ্যান গঘের আঁকা সেই ছবিই
সম্প্রতি, তাঁর পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করার পর, তাঁদের উপস্থিতিতে আর্লিংটনের ন্যাশনাল সেমেট্রিতে সমাধিস্থ করা হয় হেডেনকে। গান স্যালুটের মাধ্যমে জানানো হয় বিশেষ সামরিক সম্মাননা। প্রায় ৭৮ বছর পর, হারানো সদস্যকে ‘খুঁজে’ পেয়ে খুশি হেডেনের পরিবারও। শেষ পর্যন্ত দেশপ্রেম বা বীরত্বের এই স্বীকৃতিটাকেই ‘প্রাপ্তি’ বলে মনে করেছেন তাঁর উত্তরসূরিরা। কিন্তু হেডেন কি শুধুই একা? এমন গোটা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ের এমনই হাজার হাজার গল্প। এখনও তাঁরা নিখোঁজ কেউ কেউ। সেই রহস্যের সমাধান ঠিক কবে মিলবে, কবে তাঁরা যোগ্য মর্যাদা পাবেন— জানা নেই কারোরই…
আরও পড়ুন
চল্লিশের দশকেই আটকে টুইটারের পেজ, লাইভ সম্প্রচার চলে বিশ্বযুদ্ধের!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হলোকাস্টে নিহত একমাত্র ভারতীয়কে মনে রাখেনি ইতিহাস