শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতা - আরও একবার প্রতিবাদের হাতিয়ার হয়ে উঠল রবীন্দ্রনাথের গান

৬ জানুয়ারির সন্ধে। শান্তিনিকেতনে মন্দিরের সামনে জমায়েত হলেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রী। উপলক্ষ্য, দিল্লির জেএনইউ-র হোস্টেলে দুষ্কৃতী আক্রমণের প্রতিবাদ। কিন্তু তাঁদের প্রতিবাদের ভাষা? সকলে একসঙ্গে শুরু করলেন গান- ‘বিধির বাঁধন কাটবে তুমি এমনি শক্তিমান…’। হ্যাঁ, এখানেও তাঁদের আশ্রয় রবীন্দ্রনাথ। তাঁর গানেই খুঁজে পেয়েছেন প্রতিবাদের রসদ। অন্যদিকে, দুপুরে কলকাতার রাস্তায় সঙ্গীতশিল্পী মৌসুমী ভৌমিকের সঙ্গে গলা মেলাল আমজনতাও – ‘তব করুণারুণ রাগে / নিদ্রিত ভারত জাগে।’ এভাবেই রবীন্দ্রনাথ উঠে এলেন বারবার।

অবশ্য এটা শুধু আজকের কথা নয়। প্রেমে, বিরহে, প্রকৃতিতে তো বটেই, মিছিলে-আন্দোলনেও বহু মানুষ রবি ঠাকুরের গানে নিজের ভাষা খুঁজে পেয়েছেন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনই মনে করুন। লর্ড কার্জন বাংলাকে ভাগ করতে বদ্ধপরিকর। এমন অবস্থায় রাস্তায় নামলেন রবীন্দ্রনাথ। লিখলেন একের পর এক গান, যে কথায় প্রতিবাদের সুর খুঁজে পেল বাঙালি। 'বিধির বাঁধন কাটবে তুমি', 'আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে', 'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে'— সমস্ত গান বাঙালির অস্ত্র হয়ে উঠল। সেই গান নিয়েই পথে নেমে পড়লেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ।

https://www.facebook.com/swati.ganguly.39/videos/10157057390631701/

শুধু কি বঙ্গভঙ্গ? স্বাধীনতা আন্দোলনের বাকি সময়টা জুড়ে এই গানগুলি আরও ছড়িয়ে পড়েছে। রবীন্দ্রনাথের মতোই শাশ্বত হয়ে উঠল তাঁর প্রতিবাদের ভাষ্য। পরবর্তীতে বিপ্লবের ভাষা বদলে গেলেও এই গানগুলোকে অস্বীকার করতে পারেননি কেউ। পূর্ব পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলনের সময়, বাংলা ভাষাকে বাঁচানোর লড়াইয়ে, দেশকে স্বাধীন করার লড়াইয়ে আবারও প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠল রবীন্দ্রনাথের প্রতিবাদের গান।

https://www.facebook.com/sujit.mandal.94009/videos/1253045148222861/

২০১৯-এর কথা। কৃষক আত্মহত্যা নিয়ে একটি র‍্যাপ জনপ্রিয় হল সোশ্যাল মিডিয়ায়। গেয়েছেন কলকাতারই এক গায়ক। আশ্চর্যের ব্যাপার, তিনি সেখানেও প্রতিবাদের মন্ত্র হিসেবে খুঁজে নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথকে, খুঁজে পেয়েছেন 'একলা চলো রে'-এর মধ্যে। তারপর, জেএনইউ, সিএএ ইস্যুতেও ভরসা তিনিই। ছাত্রদের বিরুদ্ধে আক্রমণের প্রতিবাদেও, তরুণ প্রজন্ম আশ্রয় নিলেন তাঁরই। যুগে যুগে রবীন্দ্রনাথের গানই সাহস দিয়েছে আমাদের। প্রেমেও, প্রতিবাদেও।

Latest News See More