পাঁচটি ভিন্ন রঙের বৃত্ত, যে চিহ্ন দিয়েই চেনা যায় অলিম্পিককে। আসলে পাঁচটি মহাদেশকে এক সুতোয় বেঁধে রাখার নামই অলিম্পিক। কিন্তু যাঁরা খাতায় কলমে এই পাঁচ মহাদেশের বাইরে থাকেন, অর্থাৎ এই পৃথিবীতে থেকেও যাঁদের নিজস্ব কোনো দেশ নেই? পিঠে কাঁটাতারের দাগ নিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভেসে বেড়ানো সেইসমস্ত খেলোয়াড়দের নিয়েই অলিম্পিকের আসরে হাজির হল এক বিশেষ দল। পৃথিবীর নানা প্রান্তের ২৯ জন খেলোয়াড়। তাঁদের হাতে কোনো বিশেষ দেশের পতাকা নেই। সাদা পতাকার উপরে আঁকা অলিম্পিকের নিজস্ব চিহ্ন। এই পৃথিবীই তাঁদের দেশ।
বিগত এক দশক ধরে যুদ্ধের বাস্তবতায় ক্রমশ বেড়ে চলেছে উদ্বাস্তুর সংখ্যা। ভিটেমাটি ছেড়ে যে কত মানুষ ভেসে চলেছেন, তার প্রকৃত হিসাব হয়তো কারোর কাছেই নেই। তবে সংখ্যাটা কোটির অঙ্ক ছুঁয়েছে অনেক আগেই। যা কিনা অনেক দেশের জনসংখ্যাকেও হার মানায়। ছিন্নমূল এইসমস্ত মানুষদের প্রতিনিধিত্বের উপযুক্ত সুযোগ করে দিতে হবে, এমনটাই নির্দেশ ছিল জাতিপুঞ্জের ২০১৫ সালের অধিবেশনের। এই নির্দেশের কয়েকমাসের মধ্যেই এক অভিনব সিদ্ধান্ত নেয় আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি। তখন দোরগোড়ায় রিও অলিম্পিক। আর সেই প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানেই প্রথম উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের নিয়ে বিশেষ দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি। ইথিওপিয়া, সুদান, সিরিয়া এবং কঙ্গো থেকে বিতারিত ১০ জন খেলোয়াড়কে নিয়ে তৈরি হয়েছিল এই বিশেষ দল। আর তাঁদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে সমস্তরকম সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ব্রাজিলের ১১০০ জন খেলোয়াড়।
রিও অলিম্পিকের সেই ঐতিহাসিক পদক্ষেপকেই আগামী প্রতিটা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানায় কমিটি। অলিম্পিক কমিটির পাশাপাশি জাতিপুঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক স্পোর্টস ফেডারেশনের সদস্যদের নিয়ে গড়ে ওঠে বিশেষ কমিটি। লক্ষ্য টোকিও অলিম্পিক। এবারে আরও অনেক বেশি সংখ্যক খেলোয়াড়কে জায়গা করে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এগোতে থাকে কাজ। দেখতে দেখতে গড়ে ওঠে এক বিরাট তালিকা। প্রায় ৪০ জন ছুঁই ছুঁই সেই তালিকা অবাক করেছিল অনেককেই। কিন্তু তারপরেও অনেকেই সেই দল থেকে নিজেদের নাম সরিয়ে নেন। কেউ নিজের পুরনো দেশেই ফিরে যান। কেউ অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকেই সরে দাঁড়ান। কিন্তু কেন এভাবে সরে গেলেন খেলোয়াড়রা? কারণ এখনও যে তাঁদের প্রশিক্ষণ, খেলাধুলোর অন্যান্য খরচ ইত্যাদির জোগান নেই। রিও অলিম্পিকের সময় ব্রাজিলের মাটিতেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু এবার তো অতিমারীর কারণে জাপান সেই দরজা খুলে দেয়নি।
তারপরেও ২৯ জন সদস্যের রিফিউজি দল হাজির হয়েছে টোকিও অলিম্পিকে। সমস্তরকম রাষ্ট্রীয় সুযোগ থেকে বঞ্চিত খেলোয়াড়রা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন চোখে চোখ রেখে। যদিও সার্বিকভাবে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পেতে এখনও অনেকটাই বাকি। কিন্তু অলিম্পিকের এই আয়োজন যে এক নতুন ইতিহাস লিখতে চলেছে, তাতে সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন
বয়স মাত্র ১২, পরাজয়েও লড়াই থামেনি অলিম্পিকের কনিষ্ঠতম খেলোয়াড়ের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
অলিম্পিকের দ্বিতীয় দিনেই সাফল্য ভারতের, ভারোত্তলনে রুপোজয়ী মীরাবাঈ চানু