বিশ্ব উষ্ণায়নের গতি কীভাবে কমিয়ে আনা যায়— বিগত কয়েক দশক ধরেই জোর কদমে গবেষণা চলছে তা নিয়ে। বৃক্ষরোপণ, কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণের বাইরেও আরও বেশ কিছু অভিনব সমাধান দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। তার মধ্যে অন্যতম বিকল্প ছিল সূর্যের তাপীয় বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ। অর্থাৎ, বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পরই পৃথিবীতে আগত সূর্যরশ্মিকে (Sunlight) প্রতিফলিত (Reflection) করে মহাশূন্যে পাঠিয়ে দেওয়া। কিন্তু তাতে সমস্যা সমাধানের বদলে নতুন করে বাড়বে জলবায়ু সংকট। এবার এমনটাই জানালেন গবেষকরা।
‘ওয়্যারস ক্লাইমেট চেঞ্জ’ জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এই বিশেষ গবেষণা প্রবন্ধ এবং একটি খোলা চিঠি। সূর্যরশ্মিকে প্রতিফলিত করার সমস্ত উদ্যোগ অনিবার্যভাবে যাতে বন্ধ করা হয়, সেই অনুরোধই জানিয়েছেন বিশ্বের ৬০ জন প্রথম সারির পরিবেশ গবেষক। খোলা চিঠির প্রধান লেখক তথা ওয়েজেনিঞ্জেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা আরতি গুপ্ত ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ বলেই অভিহিত করেছেন এই প্রযুক্তিকে। কিন্তু হঠাৎ করে উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণের এমন একটি হাতিয়ার ব্যুমেরাং হয়ে উঠল কীভাবে?
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে সূর্য থেকে আগত আলোকরশ্মির শক্তি শোষিত হওয়ার পর কমে যায় তার তরঙ্গ। আর তার ফলেই আলোকতরঙ্গ বদলে যায় তাপীয় তরঙ্গে। যা আর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে বেরতে পারে না। কিন্তু আগত আলোকতরঙ্গের একটা বড়ো অংশ পৃথিবী থেকে প্রতিফলিত করে মহাশূন্যে পাঠিয়ে দিলে প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদায় ঘাটতি দেখা যেতে পারে আগামীদিনে।
হ্যাঁ, সূর্যই যে সকল শক্তির উৎস— তা ছোটো থেকেই পড়ে এসেছি আমরা সকলেই। ওজোন স্তরই হোক কিংবা মহাসাগরের রাসায়নিক গঠন— সবটার পিছনেই দায়ী সূর্যর আলোকরশ্মি। সেই রশ্মিকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের আগেই প্রতিফলিত করলে নতুন করে ওজোন গ্যাস তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে পৃথিবীর বুকে থাবা বসাবে অতিবেগুনী রশ্মি-সহ অন্যান্য নানা মহাজাগতিক বিকিরণ। জীবমণ্ডল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও জড়িয়ে রয়েছে তার সঙ্গে।
আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে পারমাণবিক বিদ্যুতের দাবি
পাশাপাশি সূর্যের প্রভাবেই নিয়ন্ত্রিত হয় পৃথিবীর আবহাওয়া। সেক্ষেত্রে সূর্যরশ্মির প্রতিফলনে বড়োসড় বদল আসবে বৈশ্বিক আবহাওয়ায়। ক্ষতি হবে কৃষিকার্যের। এমনকি আকাশের রং-ও বদলে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে পর্যাপ্ত আলোকরশ্মির অভাবে।
আরও পড়ুন
তুষারপাতের পরিবর্তে বৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার মেরু অঞ্চল
সাধারণত, সালফার ও অন্যান্য প্রতিফলক পদার্থের কণা স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওপরে ছড়িয়েই প্রতিফলিত করা হয় সূর্যরশ্মিকে। একবার এই ধরনের পদার্থ ছড়িয়ে দেওয়া হলে, তাদের অস্তিত্ব কোনোভাবেই সম্পূর্ণ মুছে ফেলা সম্ভব নয়। ফলে, উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা ফুরলেও, স্বতন্ত্রভাবেই কাজ চালিয়ে এই কণাগুলি। গবেষকদের অভিমত, অনিয়ন্ত্রিতভাবে উষ্ণতা হ্রাস পেলে ফিরে আসতে পারে হিমযুগও। সব মিলিয়ে এই প্রক্রিয়া যে পৃথিবীর সর্বনাশ ডেকে আনতে যথেষ্ট, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন
শুকিয়ে যাচ্ছে হিমবাহ, ভাঙছে গ্রামের ঐক্যও; জলবায়ু পরিবর্তনের কোপ কাশ্মীরে
এই মর্মেই গবেষকরা কোনোরকম বহিরাঙ্গন পরীক্ষা, প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা, পেটেন্ট কিংবা জন-তহবিল তৈরির বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন একজোট হয়ে। অন্যদিকে জাতিসংঘের মতো আন্তির্জাতিক প্রতিষ্ঠানও যাতে এমন প্রকল্পে সায় না দেয়, সেই অনুরোধও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এখন দেখার এই খোলা চিঠি দেখার পর কী প্রতিক্রিয়া জানায় রাষ্ট্রপুঞ্জের এনভায়রনমেন্ট বোর্ড…
Powered by Froala Editor