সর্বাধিক মহাকর্ষীয় তরঙ্গের হদিশ, নতুন রহস্য চিনছেন বিজ্ঞানীরা

মহাকাশের মধ্যে অদৃশ্য ঢেউ, ১০০ বছর আগেই তার অস্তিত্বের সংকেত দিয়ে গিয়েছিলেন আইনস্টাইন। তবে ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এই তরঙ্গ, কয়েক বছর আগেও তাই নিয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা ছিল না বিজ্ঞনীদের। সম্প্রতি প্রায় অঘটনের মতোই হাতের কাছে এসে গিয়েছে নানা সূত্র। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে ৩২টি মহাকর্ষীয় তরঙ্গের (Gravitational Wave) সংকেত পেয়েছে নাসার লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজারভেটরি বা লিগো (LIGO)। ২০১৯-২০ সালের এই পর্যবেক্ষণ যে মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা বদলে দেবে, তেমনটা তখনই আশা করেননি কেউই। পরীক্ষার ফলেই উঠে আসছে নতুন নতুন তথ্য। আর এইসমস্ত তথ্য নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন আর্ক সেন্টার ফর এক্সসেলেন্স ইন গ্র্যাভিটেশনাল ডিসকভারি বা অজ-গ্যাভ-এর বিজ্ঞানীরা। গবেষণার সূত্রে উঠে আসছে আরও নানা প্রসঙ্গ।

১৯১৬ সালে আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বের প্রসঙ্গে প্রথম মহাকর্ষীয় তরঙ্গের কথা বলেন আইনস্টাইন। এই তত্ত্ব অনুযায়ী মহাকাশে যখন দুটি ভারী বস্তু একে অপরের কাছাকাছি আসে, তখন মহাকাশেও ঢেউ ওঠে। ঠিক যেমন পুকুরের জলে ঢিল ছুঁড়লে ঢেউ ওঠে। তবে তখন এই কথা প্রায় কেউই মেনে নেননি। প্রায় এক শতাব্দী পর ২০১৫ সালে নাসার লিগো অবজারভেটরি প্রথম মহাকর্ষীয় তরঙ্গের সন্ধান পায়। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৯০টি মহাকর্ষীয় তরঙ্গের সন্ধান পেয়েছে লিগো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক তরঙ্গ দেখা গিয়েছে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের মার্চ মাসের মধ্যে। এই সময় মোত ৩২টি মহাকর্ষীয় তরঙ্গ দেখা যায়। সংখ্যার দিক থেকে তো বটেই, চরিত্রের দিক থেকেও এগুলি একেবারে অন্যরকম।

এর আগে ২ বার একসঙ্গে একাধিক মহাকর্ষীয় তরঙ্গের সন্ধান পেয়েছিল লিগো। তবে সেইসব তরঙ্গ ছিল দুটি ব্ল্যাকহোলের কাছাকাছি আসার মুহূর্তে তৈরি হওয়া। সাধারণত লিগোর পক্ষে ব্ল্যাক হোল এবং নিউট্রন স্টারের প্রভাবে তৈরি মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে একটি নিউট্রন স্টার এবং একটি ব্ল্যাকহোলের প্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে তরঙ্গগুলি। ভরের দিক থেকে অবশ্য কোনোটিই খুব ভারী নয়। দুটির মিলিত ভর ১৮টি সূর্যের সমান হতে পারে বলে মনে করছেন অজ-গ্যাভ-এর বিজ্ঞানীরা। এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে, তাই বিজ্ঞানীদের অজানা ছিল। এক শতাব্দী আগে আইনস্টাইনের দিয়ে যাওয়া সংকেত আজও অবাক করছে বিজ্ঞানীদের।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ব্ল্যাকহোলের গ্রাসে নক্ষত্রও! খুলল পদার্থবিদ্যার নতুন দিগন্ত