বিগত দেড় বছরে সম্পূর্ণভাবেই বদলে গেছে আমাদের স্বাভাবিক যাপনচিত্র। দৈনিক রুটিনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে নির্জনবাস। আক্রান্তের সংখ্যা কমার সঙ্গে সঙ্গে বিধি-নিষেধ খানিকটা শিথিল হলেও এখনও ছন্দে ফিরতে পারেনি সমাজ। আর মহামারীর এই আবহে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিনোদন-জগৎ। আরও ভালো করে বলতে গেলে, জনসমাগম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিজদের মেলে ধরবার আকাশটাই হারিয়েছেন শিল্পীরা। বন্ধ হয়েছে উপার্জনের পথ। কিন্তু এভাবেই কি গতিরুদ্ধ হবে শিল্পের? না, বরং ভার্চুয়াল মিডিয়াকে হাতিয়ার করেই এবার অভিনব প্রদর্শনীর আয়োজন করল ‘আমরা কবিতাবাড়ি’ (Aamra Kobitabari)।
“বিভিন্ন অনুষ্ঠান ছাড়াও প্রতিবছর আমরা নিজস্ব একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান করি। গত বছর কোভিড পরিস্থিতির কারণে তৃতীয় বর্ষের সেই অনুষ্ঠানটাই করা সম্ভব হয়নি। সেটা আরও বেশি দুঃখজনক ছিল এই কারণে, যে আমরা প্রতিবার এই অনুষ্ঠানে নতুন কিছু কাজ করার চেষ্টা করি। সেই আক্ষেপ মেটাতেই সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি খানিকটা শিথিল হওয়ার পর দর্শনশূন্য প্রেক্ষাগৃহে আমরা নিজেদের মধ্যেই অনুষ্ঠানটা করি।”
বলছিলেন খ্যাতনামা সঙ্গীতশিল্পী, আবৃত্তিকার এবং চলচ্চিত্র পরিচালক পল্লব কীর্ত্তনীয়া (Pallab Kirtania)। তাঁর পরিচয় দেওয়া খানিকটা বাতুলতাই হবে। বছর চারেক আগে তাঁর হাত ধরেই পথ চলা শুরু হয়েছিল আবৃত্তিচর্চার সংস্থা ‘কবিতাবাড়ি’-র। এবার তাঁদের ‘তিমির ত্বিষা’ শীর্ষক শেষ বার্ষিক অনুষ্ঠানটিই দেখা যাচ্ছে ডিজিটাল স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ‘মিউসিয়ানামাইলস’-এ। গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকেই শুরু হয় অনুষ্ঠানটির প্রদর্শনী। চলবে আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত।
আরও পড়ুন
জলের লাইনের বিবাদকে সঙ্গে নিয়েই আমার কবিতা চর্চা চলে, বলেছিলেন দিনেশ স্যার
বিগত বছরগুলিতে দলগত আবৃত্তি এবং একাধিক মনোগ্রাহী পরীক্ষামূলক কাজ উপহার দিয়েছে ‘কবিতাবাড়ি’। ‘তিমির ত্বিষা’ অনুষ্ঠানেও পুনরাবৃত্ত হয়েছে তাঁদের বাঁধ ভাঙার সেই প্রচেষ্টাই। প্রায় ৭৫ মিনিটের গোটা অনুষ্ঠানে সব মিলিয়ে প্রদর্শিত হয়েছে মোট ৬টি প্রযোজনা। প্রতিটির ছত্রে ছত্রেই লেগে রয়েছে অভিনবত্বের ছাপ।
আরও পড়ুন
এক ধাক্কায় ৩০০ বছর পিছিয়ে গেল ইউরোপের আধুনিক কবিতার ইতিহাস
আরও পড়ুন
হেলেন কেলারের হাতে আঙুল চালিয়ে কবিতা ‘পড়ালেন’ রবীন্দ্রনাথ
তবে খুব কিছু সহজ ছিল না এই মঞ্চ উপস্থাপনার কাজও। পল্লব কীর্ত্তনীয়ার কথায়, “আমরা অনেকগুলো ছোটো ছোটো স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছিলাম। তার সবগুলো উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। আসলে তখনও লকডাউন চলছিল। ফলে, আমাদের সকল শিল্পীরাও অংশ নিতে পারেননি এই অনুষ্ঠানে। রিহার্সালও ঠিক মতো করা সম্ভব হয়নি আমাদের পক্ষে। কিন্তু আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকব না, হারব না— এরকম একটা জেদ চেপে গিয়েছিল আমাদের মধ্যে।”
কথায় কথায় জানা গেল, এই অনুষ্ঠান যে আদৌ কোনোদিন দর্শকদের কাছে উপস্থাপন করা হবে, তা নিজেও ভাবেননি পল্লব। শুধুমাত্র এই কাজের ডকুমেন্টেশন রাখতেই ভিডিও করা হয়েছিল সমগ্র অনুষ্ঠানটির। প্রায় একবছর পর প্রকাশ্যে এল সেই অনুষ্ঠানের ভিডিও।
Powered by Froala Editor