বিশ্বের প্রবীণতম ব্যক্তির তালিকায় যাঁরা সাধারণত জায়গা করে নেন, তাঁদের সকলেরই বয়স ১০০-র বেশি। সে-খবর জায়গা করে নেয় সংবাদমাধ্যমের শিরোনামেও। তবে সার্বিকভাবে দেখতে গেলে এমন ঘটনা বিরল, ব্যতিক্রমী। পরিসংখ্যান বলছে, আজকের দিনে মানুষের গড় আয়ু (Average Lifespan) ৭৪ বছর। তবে আজকের প্রজন্মের অধিকাংশ শিশু (Children) আগামীদিনে গড়ে ১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচলেও, আশ্চর্য হওয়ার নেই কিছুই।
হ্যাঁ, এমনটাই জানাল সম্প্রতি গবেষণা। অক্সফোর্ড ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন এজিং-এর গবেষণা অনুযায়ী, আগামীতে ১০০ বছরের আয়ু পেতে চলেছে আজকের শিশুদের একটা বড়ো অংশ। বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলে এই বিশেষ প্রবণতা দেখা যাবে বলেই আশা করছেন এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এমন আশ্চর্য অনুমানের কারণ কী?
এক্ষেত্রে গবেষকরা তুলে এনেছেন পূর্ববর্তী শতকের পরিসংখ্যান এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়নকে। বিশ শতকের দিকে তাকালে দেখা যাবে, তৎকালীন সময়ে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৮ বছর। যা আজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ বছরে। অর্থাৎ, এক শতাব্দীতে প্রায় ৩০ বছর বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু। আর তার অন্যতম কারণ চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময় থেকেই ধীরে ধীরে প্রযুক্তির সৌজন্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করে চিকিৎসার গুণমান। পোলিও, স্মলপক্স, রিন্ডারপেস্ট কিংবা ক্ষয়রোগের মতো রোগ সম্পূর্ণভাবে মুছে গেছে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ থেকেই। সেইসঙ্গে প্রযুক্তির দৌলতে সম্ভব হয়েছে হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক কিংবা কিডনির মতো অঙ্গে জটিল অস্ত্রোপচার।
অবশ্য বিগত এক শতকের এই আয়ুবৃদ্ধিকে ততটাও ইতিবাচক হিসাবে মনে করতে নারাজ গবেষকরা। তাঁদের মতে, এই সময়কালে মানুষের গড় আয়ু বাড়লেও তা সুস্বাস্থ্যকর নয়। অর্থাৎ, আজকে অধিকাংশ মানুষ গড় আয়ু ৭৪ বছর হলেও, ৬০-৬৫ বছর বয়সের পর থেকেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগতে শুরু করেন তাঁরা। ফলে শেষ জীবন সুখকর হয় না মোটেই। তার কারণও খুব স্পষ্ট। আজকের দিনে যাঁরা সত্তর কিংবা আশির কোঠায় দাঁড়িয়ে তাঁরা শৈশবে তুলনামূলকভাবে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পাননি। আর এখানেই বাড়তি সুবিধা পাবে আজকের শিশুরা।
চিকিৎসায় উন্নতি যেমন সুস্থ হওয়ার সময়কাল বৃদ্ধি করেছে, তেমনই বাড়িয়েছে মানুষ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। ফলে, দীর্ঘায়িত হবে আজকের শিশুদের মধ্যবয়স। দীর্ঘদিন কর্মক্ষম থাকবে তারা। দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে বার্ধক্যকে। আর সেই সূত্রেই গবেষকদের দাবি, আগামী শতাব্দীতে অনায়াসেই ২০-২২ বছর বৃদ্ধি পাবে মানুষের গড় আয়ু। সেক্ষেত্রে এক চতুর্থাংশ ক্ষেত্রেই শতায়ু লাভ করবে মানুষ।
আপাতদৃষ্টিতে এই গবেষণা যথেষ্ট আশাজনক হলেও, এক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধকে। আগামীদিনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বহু মানুষ খাদ্য ও বাসস্থান সংকটে পড়বেন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই কোনো। তাতে কি প্রভাবিত হবে না মানুষের গড় আয়ু? যুক্তির বিচারে তেমনই তো হওয়ার কথা। অবশ্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি সে-সম্পর্কিত কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা…
Powered by Froala Editor