বাংলার আবহমান ইতিহাসের স্বাদ জানে নারকেলের তক্তি-পিঠে

‘মিষ্টান্ন অনেক রান্ধে নানাবিধ রস।
দুই তিন প্রকারের পিষ্টক পায়স।।’

পঞ্চাদশ শতাব্দীর শেষভাগে রচিত হয়েছিল বিজয়গুপ্তর ‘মনসামঙ্গল’। সেই কাব্যেও দেখি পিঠের কথা। একসময় বাঙালি মিষ্টি বলতে বুঝত পিঠে-পায়েসকেই। তখন পিঠের ওপর পৌষ-পার্বণের এমন একচেটিয়া দখলদারিও ছিল না। বাড়িতে অতিথি-কুটুম এলেও বাড়ির গিন্নিরা পিঠে বানাতেন। সেই পিঠের কত্তরকমের ভাগ। সেইসব বাহারি পিঠের অনেকগুলোই আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু এখনও বাংলার পিঠের বিপুল ভাণ্ডারের অনেকটাই বাঁচিয়ে রেখেছেন আমাদের মা-কাকিমা-জেঠিমারা। নারকেল কাজু-তক্তিও আদতে এক রকমের পিঠেই। আর এই পিঠের গায়ে লেপ্টে আছে বিজয়ার গন্ধ।

বিজয়া বলতেই মনে পড়ে ছোটবেলায় আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রণাম সারা। প্রণাম ঠোকার পরেই লোভাতুর হয়ে অপেক্ষা করা নাড়ু আর নিমকির জন্য। সেইসঙ্গে কোনও কোনও বাড়ির ভাঁড়ার থেকে বেরত নারকেলের তক্তি। আকারে চৌকোনা বরফির মতো। মুখে দিতেই অপূর্ব স্বাদে ডুবে যাওয়া। এই তক্তি-পিঠের গায়ে কতদিনের ইতিহাস লেপ্টে আছে কে জানে! আদতে এই স্বাদ চিরন্তন বাংলারই স্বাদ।

কী কী লাগবে?

কোরানো নারকেল- ২ কাপ
চিনি- ১ কাপ
গুঁড়ো দুধ- ১/৩ কাপ
দুধ- ১ কাপ
কাজুবাটা- ১/৩ কাপ

কীভাবে রাঁধবেন?

১। কড়াইয়ে কাজুবাটা বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে গ্যাসে বসিয়ে দিন।
২। অনবরত নাড়তে থাকুন যাতে কড়াইয়ে লেগে যায় না।
৩। দুধ খানিকটা টেনে এলে কাজু বাটাটা দিয়ে দিন এবং অনবরত পাক দিন যতক্ষণ মিশ্রণটি কড়াইয়ের গা থেকে ছেড়ে আসছে বা নারকেল থেকে তেল বেরিয়ে আসছে।
৪। নারকেলের মিশ্রণটি তৈরি হয়ে এলেই গরম গরম নামিয়ে নিন এবং কড়াই থেকে একটা ঘি মাখানো পাত্রে ঢালুন।
৫। গরম থাকতেই চ্যাপ্টা কোনও জিনিস, চামচ, হাতের তালু বা কোনো বাটির পিছন অংশ দিয়ে সবটা সমান করে বসান।
৬। ছুরি দিয়ে যেমন ইচ্ছে তেমন আকার দিয়ে কেটে নিন।
৭। উপরে কাজু-কিসমিস দিয়ে সাজান ও ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
৮। পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে এলে ফ্রিজে রেখে দিন দু ঘন্টা তারপর কাটা টুকরোগুলে এক এক করে তুলে নিন। নারকেল-কাজু তক্তি তৈরি।

ছবি: তর্পিণী ভুঁইঞা

Latest News See More