কিউবা-রাজনীতিতে ‘ঐতিহাসিক প্রজন্মে’র ইতি, পদত্যাগ করলেন রাউল কাস্ত্রো

১৯৫৯ সাল। দীর্ঘ বিপ্লব, সশস্ত্র আন্দোলন, গেরিলা যুদ্ধের পর এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল কিউবায়। ফিদেল কাস্ত্রো, চে গেভারার হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কমিউনিস্ট সরকার। ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশের সর্বশক্তিমান নেতার পাশাপাশি কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষপদের দায়িত্ব পালন করেছিলেন ফিদেল। তারপর সেই ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয় তাঁর ভাই রাউল কাস্ত্রোর হাতে। এবার সরে দাঁড়ালেন তিনি। ছ’দশক পর বদল আসতে চলেছে কিউবার রাজনৈতিক মহলে। শেষ হচ্ছে কিউবা-রাজনীতির এক ঐতিহাসিক অধ্যায়।

অবশ্য এই পরিবর্তন আকস্মিক নয়। ২০২১-এ কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটরি-জেনারেল পদ থেকে অবসরগ্রহণের কথা ২০১৬ সালেই ঘোষণা করেছিলেন রাউল কাস্ত্রো। তাছাড়া ২০১৯ সালে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি পদ থেকেও। তবে এবার রাউল একা নন, তাঁর পাশাপাশি ১৭ জন প্রবীণ নেতাও সরে দাঁড়াচ্ছেন পলিটব্যুরো থেকে। যাঁরা সকলেই কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিলেন কিউবান রেভেলিউশন বা জুলাই মুভমেন্টের সঙ্গে। অর্থাৎ, এই প্রথমবারের জন্য কিউবার কংগ্রেসে থাকবেন না ‘ঐতিহাসিক প্রজন্ম’-এর কোনো ব্যক্তিত্ব। 

রাউলের পদত্যাগের পর কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষাসনে বসছেন কিউবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-ক্যানেল। কাস্ত্রো ভাতৃদ্বয়ের থেকে মিগুয়েলের চরিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বলা যায় মিগুয়েল অনেকটাই আধুনিক তাঁদের তুলনায়। তা হবে নাই বা কেন? মিগুয়েলের জন্ম যুদ্ধোত্তর কিউবায়। ফলত, গেরিলা লড়াইয়ের সঙ্গে সেভাবে আত্মিক যোগও নেই তাঁর।

তবে নেতৃত্ব বদল হলেও খুব কিছু বদলাবে না কিউবার পরিস্থিতি। কারণ, ২০১৯ সালে প্রবর্তিত নতুন সংবিধানের স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল, সমাজতন্ত্রে অক্ষুণ্ণ থাকবে কিউবার আস্থা। তাছাড়া দেশের মূল ক্ষমতায় থাকছে কমিউনিস্ট পার্টিই। ফলে, তরুণ প্রজন্মের চাপে কিছু বদল এলেও, মূল নীতি থাকবে অপরিবর্তিতই।

আরও পড়ুন
গানের সূত্রে ঢুকে পড়বে পশ্চিমি পুঁজিবাদ; কিউবায় লেননকে নিষিদ্ধ করলেন ফিদেল কাস্ত্রো

তবে এই অস্থিতিকর পরিস্থিতিতে কাস্ত্রো-শাসনের অবসান নতুন করে অনুরণন তুলছে কিউবায়। ১৯৯০ সালের পর চলতি বছরে এই প্রথম ১১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে কিউবার অর্থনীতি। আশঙ্কা, দেখা দিতে পারে খাদ্য সংকটও। যার মূল কারণই হল মহামারী। জোর ধাক্কা খেয়েছে কিউবার উপার্জনের মূলক্ষেত্র, পর্যটন শিল্প। তার ওপরে ট্রাম্পের চাপানো বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরও কঠিন করে তুলেছে পরিস্থিতি। যদিও আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কিউবার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে যথেষ্ট আগ্রহ দেখাচ্ছেন ক্ষমতায় আসার পর থেকেই।

আরও পড়ুন
সমলিঙ্গ বিবাহকে স্বীকৃতি গির্জার, নতুন যুগের সূচনা ফিদেল কাস্ত্রোর দেশে

বর্তমানের এই কঠিন সময়কে সামাল দিতে যে বেশ নাজেহাল কিউবা প্রশাসন, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। ইন্টারনেটের দৌলতে মাঝে মাঝেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ফুটে উঠছে সেই সামাজিক বৈষম্যের ছবি। হচ্ছে বিক্ষোভ-প্রতিবাদও। এখন দেখার, কাউবার রাজনৈতিক মঞ্চে এই বদল কতটা সুচারুভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এই চ্যালেঞ্জকে। সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব…

আরও পড়ুন
ফিদেল কাস্ত্রো-র সংস্পর্শে নবজন্ম মারাদোনার; মৃত্যুতেও ছুঁয়ে রইলেন ‘দ্বিতীয় পিতা’কেই

Powered by Froala Editor