বিলুপ্তির পথে তাসমানিয়ান টিয়া, অবশিষ্ট আর মাত্র ৩০০টি

এখনও অবধি সম্পূর্ণভাবে জানাই হয়নি তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। পরিষ্কারভাবে চিত্রিতও হয়নি তাদের স্বাভাবিক যাপনচিত্র। আর তার মধ্যেই সাম্প্রতিক গবেষণা জানান দিল অবলুপ্তির কোলেই ঢলে পড়তে চলেছে তাসমানিয়ান টিয়া। অস্ট্রেলিয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গবেষণা জানান দিল, আর মাত্র ৩০০টিরও কম এই প্রজাতির টিয়া বেঁচে রয়েছে পৃথিবীজুড়ে।

বিরল এই প্রজাতির পাখিটিকে খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর বর্তমানে। তাই অভিনব পদ্ধতিতেই সুমারি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা। শীর্ষস্থানীয় গবেষক ড. জর্জ ওলা জানান, এই প্রজাতির টিয়ার দেহ থেকে রক্ত এবং পালকের ডিএনএ-র পরীক্ষার মাধ্যমেই নির্ধারিত হয়েছে জনসংখ্যা। যা পূর্ববর্তী অনুমানের থেকে বহুলাংশে কম। গত কয়েক দশক ধরেই তাসমানিয়ান সুইফট টিয়ার সংখ্যা গণনার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে এতদিন কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যার হদিশ দিতে পারেননি তাঁরা। এতদিন পর সেই রহস্যের সমাধান হলেও, ফলাফলা একেবারেই আশাপ্রদ নয়।

সেইসঙ্গে জিনের বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাসমানিয়ান টিয়ার গতিবিধি সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া গেল এই প্রথম। দ্রুত গতি সম্পন্ন সুইফট প্যারট মূলত যাযাবর-চরিত্রের। তাসমানিয়া প্রজনন-ক্ষেত্র হলেও মাইলের পর মাইল উড়ে অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডে খাবারের খোঁজে পাড়ি জমায় এই প্রজাতির পাখিগুলি। 

সহ-গবেষক রব হেইনসোয়ান জানান, একাধিক কারণের জন্যই অবলুপ্তির দিকে হাঁটছে বিরল এই প্রজাতি। তার মধ্যে অন্যতম হল বৃক্ষচ্ছেদন। যাযাবর চরিত্রের হওয়ার জন্য এই বিশেষ প্রজাতি পর পর দুটি মরশুমে, একই বৃক্ষে আশ্রয় নেয় না। প্রতি বসন্তে এমন কোনো বৃক্ষের সন্ধান করে সুইফট প্যারট, যেখানে কোটরের পাশাপাশি থাকবে ফুলের উপস্থিতিও। তবে তেমনটা খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর হয়ে উঠেছে তীব্রমাত্রার বননিধনের ফলে। বাসস্থান হারানোর কারণে শিকারি পশুদের কাছে দ্রুত প্রাণ হারাচ্ছে বিরল এই প্রজাতির প্রাণীগুলি। 

তবে জিনগত বিশ্লেষণে জনসংখ্যা নির্ণয়ের এই অভিনব পদ্ধতি শুধু তাসমানিয়ান টিয়া নয় বরং অন্যান্য বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংখ্যা গণনাতেও সাহায্য করবে। সম্প্রতি ‘অ্যানিমাল কনসারভেশন’ বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণা। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন কৃত্রিমভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করলে, আর হয়তো কয়েক বছরের মধ্যেই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে সুইফট প্যারট। তবে সেই সংরক্ষণ প্রক্রিয়া কীভাবে সম্ভব, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো উত্তর এখনও জানা নেই বিজ্ঞানীদের। চলছে গবেষণা তবে অন্যদিকে অনিশ্চয়তার মধ্যেই ঝুলে রয়েছে বিরল এই প্রজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সম্ভাবনা...

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
জলবায়ুর পরিবর্তনই মেরু-গণ্ডারদের অবলুপ্তির কারণ, চাঞ্চল্যকর তথ্য গবেষণায়