লকডাউন, ভাইরাসের সংক্রমণ, গৃহবন্দিদশা। এই তিনের বেড়াজালে হাঁফিয়ে উঠেছে মানুষের জীবন। কিন্তু প্রকৃতি আমাদের একঘেয়েমি কাটাতেই উপহার দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক মহাজাগতিক দৃশ্যের। লুনার এক্লিপ্স, ব্লাড মুন, পিঙ্ক সুপারমুন, এক সরলরেখায় মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনির অবস্থান আগেই দেখেছিল বিশ্ববাসী। এবার ২০২০-র প্রথম সূর্যগ্রহণের সাক্ষী থাকবে পৃথিবী। বিরল বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে এই বছর।
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই গ্রহণে পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে যাবে না চারপাশ। চাঁদ অবস্থান করবে সূর্যের একেবারে মাঝামাঝি অংশে। ফলে সূর্যের মাঝে তৈরি হবে একটি বৃত্তাকার উপচ্ছায়া। তার চারপাশে দেখা যাবে আগুনের বলয়, যাকে মহাকাশবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘রিং অফ ফায়ার’। বিরল এই মহাজাগতিক ঘটনা শেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
আগামীকাল ২১ জুন পাকিস্তান, ভারত, চিন, বাংলাদেশসহ এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে স্পষ্টভাবেই প্রত্যক্ষ করা যাবে এই সূর্যগ্রহণ। ভারতের পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার জানাচ্ছে, শুধুমাত্র রাজস্থান, হরিয়ানা এবং উত্তরাখণ্ড থেকে দেখা যাবে বলয়গ্রহণ। বাকি অঞ্চলগুলিতে ধরা দেবে সূর্যের আংশিক গ্রাস। ভারতীয় সময় অনুযায়ী ৯টা ১৫মিনিট ৪৮ সেকেন্ড থেকে শুরু হবে গ্রহণ। জারি থাকবে দুপুর ২টো ২মিনিট ১৭ সেকেন্ড অবধি। তবে বলয় গ্রাস দেখা যাবে সকাল ১০টা ১৭মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৪ মিনিট অবধি।
তবে লকডাউনের জেরে এ বছর বন্ধ হয়েছে ছাত্র-ছাত্রী এবং সাধারণ মানুষকে গ্রহণ দেখানোর জন্য বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সংস্থার উদ্যোগ। পুরো বিষয়টিকেই তাই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনলাইন মাধ্যমে। বিরলা মিউজিয়াম জানিয়েছে, তারা টেলিস্কোপের প্রতিবিম্ব গঠন করে সরাসরি ওয়েবিনারে দেখার সুযোগ করে দেবে মানুষকে। পাশাপাশি যাঁরা বাড়ি থেকেই গ্রহণ দেখতে ইচ্ছুক, তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে অ্যালুউমিনাইজড মাইলার ফিলটার ছাড়া এই দৃশ্য না দেখতে। চোখের ক্ষতি হতে পারে সেক্ষেত্রে। তবে কলকাতা এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গ্রহণ দেখায় সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে মৌসমভবন। বর্ষার আগমনে এবং নিম্নচাপের দরুন অংশত মেঘলা থাকতে পারে আকাশ।
অন্যদিকে এসবের মধ্যেই শুরু হয়েছে হাজারো জল্পনা। অনেকেই দাবি করেছেন এই গ্রহণের ফলে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে করোনা ভাইরাস। আবার অনেকের ধারণা, এই গ্রহণ ভাইরাসের আবহে অশনিসংকেত। অবশ্য বিজ্ঞানীরা এই মন্তব্যকে হাস্যকর হিসাবেই ধরছেন। এসব অবৈজ্ঞানিক তত্ত্বে বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকার সুযোগ হাতছাড়া করাটা যে নেহাতই বোকামি, তা তাঁরা জানিয়েছেন স্পষ্ট করেই।
Powered by Froala Editor