ভাইরাসের সংক্রমণে জর্জরিত মানব সভ্যতা। তবে এর ফলে বেশ স্বস্তিতেই যে রয়েছে পৃথিবী, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। সভ্যতার হঠাৎ স্থবিরতায় কমেছে দূষণের পরিমাণও। যার ফলে আসতে আসতে প্রকৃতিও সারিয়ে তুলছে তার ক্ষত। আর চমকে দিচ্ছে মানবসভ্যতাকে অবিশ্বাস্য কিছু উপহার দিয়ে। এর আগেও দেখা দিয়েছিল বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীরা। ফিরে আসতে দেখা গিয়েছিল হারিয়ে যাওয়া পাখিদের। এবার ভারতে খুঁজে পাওয়া গেল বিপন্নপ্রায় অর্কিড। বিরল সেই অর্কিডের ফুল ফুটল ১১৮ বছর পর এই অচল অবস্থাতেই।
ইউলোফিয়া অবটুসা। বিজ্ঞানসম্মত নাম এটি হলেও আঞ্চলিক ভাষায় গ্রাউন্ড অর্কিড হিসাবেই পরিচিত এই গাছটি। সাদা আর গোলাপি রঙের এক অদ্ভুত সৌন্দর্য ধরে রাখে এই অর্কিডের ফুল। অত্যন্ত বিরল এই অর্কিড শেষবারের জন্য ভারতীয় ভূভাগে দেখা গিয়েছিল ১৯০২ সালে। উত্তরপ্রদেশের পিলিভিটে। তার রেকর্ডও রয়েছে ব্রিটেনের কিউ হার্বেরিয়ামের তথ্যেও। ভারতে মূলত গাঙ্গেয় উপত্যকাতেই দেখা মিলত এই অর্কিডের। উত্তরাখণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশের বেশ কিছু স্থানে ফুটত এই বিস্ময়-পুষ্প।
চিরতরে হারিয়ে গেলেও ২০০০৮ সালে বাংলাদেশে এই অর্কিডকে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৪ সালেও সেই ফুল দেখা গিয়েছিল আবার। তবে দেখতে একই রকম ও একই গণের হলেও সেই অর্কিডের প্রজাতি ছিল ভিন্ন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভারতে খুঁজে পাওয়া অর্কিডটি যে সেই বিলুপ্ত প্রজাতিটিই। সম্প্রতি দুধুয়া টাইগার ফরেস্টে টহলদারি করছিলেন একদল বনকর্মী। এই সময়ই সাদা-গোলাপি রঙের অজানা একটি অর্কিডের ফুল দৃষ্টি-আকর্ষণ করে তাঁদের। পরে সন্ধান চালাতে জঙ্গলের আরও একটি অংশে এই অর্কিডের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। পরে উদ্ভিদবিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেন প্রজাতিটিকে।
বহু যুগ পর অর্কিডের এই প্রত্যাবর্তনে উচ্ছ্বসিত উদ্ভিদবিদরা। ইন্ডিয়ান ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফাউন্ডেশনের কর্তা ডঃ মুদিত গুপ্তা আশাবাদী, জঙ্গলেও আরও কিছু অংশে খুঁজে পাওয়া যাবে এই অর্কিডকে। চলছে তারই সন্ধান। বিজ্ঞানীদের তথ্য রেকর্ড থেকে জানা যায় উনিশ শতকের শেষের দিকেই এই বিরল অর্কিডকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস নেওয়া হয়েছিল। নিষিদ্ধ হয়েছিল গাছ থেকে এই অর্কিড তুলে ফেলাও। তবে তা সম্ভব হয়নি আর। হারিয়ে গেছিল প্রজাতিটি। ১১৮ বছর পর প্রকৃতি সেই সুযোগই যেন ফিরিয়ে দিল মানুষকে। তাই বিপন্ন এই প্রজাতির সংরক্ষণের জন্যই তোড়জোড় শুরু করেছেন বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদরা...
Powered by Froala Editor