অনন্ত রহস্য বুকে নিয়ে রয়েছে সমুদ্রজগত। আবার ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গে সেইসব রহস্য পাড়েও উঠে আসে কখনও কখনও। সম্প্রতি তেমনই এক অদ্ভুত সামুদ্রিক জন্তুর সন্ধান পেয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার (California) এক ব্যক্তি। বিজ্ঞানীদের কাছে অপরিচিত না হলেও এমন জন্তুর সঙ্গে পরিচিত নন অনেকেই। সামাজিক মাধ্যমে তাই ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে উঠেছে সেই ছবি। বিশাল আকৃতির গোলাকার মাছের মতো চেহারা, আবার তার মাথায় একটি শুঁড়ও রয়েছে। দাঁত দেখলে মনে হয় যেন ছুরির ফলা। দানবাকৃতি এই মাছের নাম ‘ফুটবল ফিশ’ (Football Fish)। কেউ কেউ আবার গভীর জলের দৈত্যও বলে থাকেন।
গত ১৩ নভেম্বর জে বেইলার নামে এক ব্যক্তি ক্যালিফোর্নিয়ার ব্ল্যাক’স বিচ ধরে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। হঠাৎই দূর থেকে চোখে পড়ে অদ্ভুত এই প্রাণীটিকে। অবশ্য প্রথমে তিনি প্রাণীটিকে সাধারণ জেলিফিশ মনে করেছিলেন। আরও কিছুটা কাছে যেতেই ভুল ভাঙে। একেবারে সামনে গিয়ে দেখতে পান তার খোলা মুখে ঝকঝক করছে অসংখ্য ধারালো দাঁত। সদ্য শান দেওয়া ছুরির ফলার মতো সেই দাঁত। আবার শরীরের দুপাশ দিয়ে সাজানো রয়েছে অসংখ্য কাঁটা। বাকি শরীর বিরাট আকারের একটি গোলাকার মাছের মতোই। তবে তার মাথার কাছে আবার রয়েছে একটি শুঁড়ের মতো অঙ্গ। অদ্ভুত প্রাণীটিকে দেখামাত্র তার ছবি তুলে নেন বেইলার। তারপর সামাজিক মাধ্যমে সেই ছবি পোস্ট করে প্রাণীটির সম্বন্ধে জানতে চান।
অবশেষে বেইলারের প্রশ্নের উত্তর দেন স্ক্রিপস ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানান, বিজ্ঞানীদের কাছে প্রাণীটি হাইম্যানটোলোফাইড নামে পরিচিত। তবে সাধারণ ভাষায় তাকে ফুটবল ফিশ বলা হয়ে থাকে। সমুদ্রে ৩০০০-৪০০০ মিটার গভীরতায় দেখা মেলে এই প্রাণীর। ছোটো ছোটো জলজ প্রাণীদের কাছে এই জন্তুটি মূর্তিমান আতঙ্ক। ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত সমস্ত সমুদ্রেই দেখা যায় ফুটবল ফিশ। তবে ২০০ বছর আগেও তার অস্তিত্বের কথা জানতেন না কেউ। ১৮৩৭ সালে জোহান রেইনহার্ড নামে এক বিজ্ঞানী প্রথম আবিষ্কার করেন প্রাণীটিকে। চলতি বছরের শুরুতেও ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে একটি মৃত ফুটবল ফিশের কথা শোনা গিয়েছিল। গভীর সমুদ্র ছেড়ে কেন তারা উপকূলে এসে মৃত্যুকেই বেছে নিচ্ছে, সেটাই এখন গবেষকদের কাছে রহস্য।
Powered by Froala Editor