ঘড়িতে দুপুর ১২টা বাজতে আর ঠিক এক মিনিট বাকি। মাথার উপরে সূর্য। আর ঠিক সেই সময় সুন্দরবনের নদীখাত দিয়ে ভেসে চলেছে একটি নৌকো। হরিণের ডাক শুনে যদি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সন্ধান করা যায়! ঠিক এই সময়েই জলের মধ্যে দেখা গেল একটি হাঁসের মতো প্রাণী। অভিযাত্রীরা প্রথমে অবশ্য বালিহাঁস বলেই মনে করেছিলেন। তবে ততক্ষণে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শৌর্যদীপ মুখার্জি বেশ কিছু ছবি তুলে নিয়েছেন তাঁর ক্যামেরায়। আর সেই ছবি ভালো করে দেখতে গিয়ে অবাক প্রত্যেকেই।
হাঁস নয়। সুন্দরবনের বুকে যে পাখিটিকে দেখা গিয়েছে, তার নাম গ্রেট ক্রেস্টেড গ্রিব। সাধারণত ইউরোপের উত্তরে ইংল্যান্ডের আশেপাশেই এই পাখির প্রজনন অঞ্চল। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে এবং কাশ্মীরের লাদাখ উপত্যকায় প্রায়ই দেখা যায় এই পাখিদের। কিন্তু সুন্দরবনে গ্রিবের দেখা পাওয়া সত্যিই আশ্চর্যের। কলকাতার এনজিও ‘অনুভব, এক্সপিডিশন ফর আ বেটার টুমরো’-র সদস্য নীলাঞ্জন রায়চৌধুরীর কথায়, এর আগে উত্তরবঙ্গে গ্রিবের দেখা মিলেছে। সুন্দরবনেও গ্রিব দেখা গিয়েছে বলে শোনা গিয়েছিল। কিন্তু তার কোনো প্রমাণ ছিল না। প্রথম প্রমাণ পাওয়া গেল ২৪ নভেম্বর, শৌর্যদীপ মুখার্জির ক্যামেরায়।
ক্যাপ্টেন সুজিত রাপতানের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের দল সুন্দরবন যায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার নিয়ে গবেষণার জন্য। তবে সেখানে গিয়ে যা পাওয়া গেল তা আরও রোমাঞ্চকর। যদিও কেন নিজের বাসস্থান ছেড়ে এতদূর এসে পড়েছে পাখিটি, তার কোনো ব্যাখ্যা জানা যায়নি। তাছাড়া বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও অবাক করে। আপাতত এই সমস্তকিছুই গবেষণা সাপেক্ষ। ইতিমধ্যে দেশের বেশ কিছু অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীর কাছে ছবিটি পাঠানো হয়েছে। তাঁরাও পাখিটির মাথা দেখে তাকে গ্রেট ক্রেস্টেড গ্রিব বলেই শণাক্ত করেছেন। তবে সুন্দরবন পর্যন্ত আসার ব্যাখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি।
Powered by Froala Editor