ডাইনোসরের পরিণত ডিম, ভিতরে আস্ত ভ্রূণ! অবাক প্রত্নতাত্ত্বিকরা

আর কিছুক্ষণ সময় পেলেই ডিম ফুটে শাবকটির জন্ম হত। কিন্তু কোনো কারণে শেষ পর্যন্ত সেই সময় পাওয়া যায়নি। তারপর প্রায় ১ কোটি বছর পেরিয়ে গিয়েছে। ডিমটি পাথরে পরিণত হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে ভ্রূণটি (Embryo) অক্ষত অবস্থাতেই জীবাশ্মে পরিণত হয়েছে। আর ভ্রূণটি অন্য কোনো প্রাণীর নয়। একটি ডাইনোসরের। ডাইনোসরের (Dinosaur) বহু ডিমের হদিশ আগেই পেয়েছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। কিন্তু তার মধ্যে এত পরিণত কোনো ভ্রূণের হদিশ পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি ‘আই-সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেই জীবাশ্ম নিয়ে বিস্তারিত গবেষণাপত্র।

২০০০ সালের শুরুর দিকে চিনের দক্ষিণাঞ্চলে খননকার্য চালানোর সময় ডিমটির সন্ধান পায় ইয়াংলিয়াং কোম্পানি। তখন থেকেই প্রত্নতাত্ত্বিকরা গবেষণা চালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এই ডিমের তাৎপর্য বুঝতে লেগে যায় আরও ১৫ বছর। ২০১৫ সাল নাগাদ গবেষকরা বুঝতে পারেন, এটি নিছক একটি ডিম নয়। বরং তার ভিতরে রয়েছে আস্ত একটি ভ্রূণও। কিন্তু ভ্রূণের কোনো ক্ষতি না করে ডিম ভেঙে তার ভিতরের সমস্তকিছু পরীক্ষা করা সম্ভব ছিল না। তাই এক্স-রে প্রযুক্তি এবং আরও নানা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নেন গবেষকরা।

৬ বছর ধরে গবেষণার শেষে ভ্রূণের গঠনটি সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পেরেছেন গবেষকরা। গবেষণাদলের প্রধান ক্যালগেরি ইউনিভার্সিটির প্রত্নতাত্ত্বিক দারলা জেলেনৎস্কি জানিয়েছেন, প্রথমবার ডিমটি নিয়ে গবেষণা করার কথা ভাবতে গিয়েই রোমাঞ্চিত হয়েছিলেন তিনি। ডাইনোসর নিয়ে এমনিই আগ্রহের শেষ নেই। কিন্তু সদ্য জন্ম নেওয়া একটি ডাইনোসরের চেহারা কেমন ছিল, সেটা আন্দাজ করা সত্যিই কঠিন ছিল। সেই চেহারা এবার পুরোপুরি জানার সুযোগ পাওয়া গিয়েছে।

দেখা গিয়েছে, ডিমের মধ্যে ডাইনোসরটি যেভাবে রয়েছে, তার সঙ্গে অন্য কোনো সরীসৃপের চরিত্র ঠিক মেলে না। বরং অনেক বেশি মেলে পাখিদের সঙ্গে। সবচেয়ে ভালো মেলে মুরগির সঙ্গে। একইভাবে মাথাটি পেটের কাছে ঝোকানো। পিছনের পা দুটি মুড়ে বুকের কাছে রাখা। আর পিঠটি রয়েছে ডিমের নিচের প্রান্তের দিকে। সেখানে ডিমের পর্দা এবং ভ্রূণের মাঝে একটি বায়ুথলিও ছিল, ক্রমশ যা শূন্যস্থানে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন
সমাজবদ্ধ জীব ছিল ডাইনোসরও! উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

ডাইনোসরের এই চরিত্র অবাক করেছে গবেষকদের। তবে তা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল না। এর আগেও ডাইনোসরের সঙ্গে নানা পাখির সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই সাদৃশ্যগুলোই বিবর্তনকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। আর সেই সুযোগটাই এবার পেয়ে গেলেন তাঁরা।

আরও পড়ুন
ভারতের নিজস্ব ‘জুরাসিক পার্ক’, দাপিয়ে বেড়াত ১৩টি প্রজাতির ডাইনোসর!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ওজনে প্রায় ৭৭ টন, পৃথিবীর বৃহত্তম ডাইনোসরের জীবাশ্ম মিলল আর্জেন্টিনায়