নিজে ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা ছিলেন না ডেনভার। তবে তাঁর ‘কান্ট্রি রোডস’ গানটির মধ্যে ফুটে উঠেছিল মায়াময় ভার্জিনিয়ার দৃশ্য। আদতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত পরিচিত শহুরে আদলের থেকে খানিক ভিন্ন ভার্জিনিয়ার পাহাড়ি প্রদেশ। আজও সেখানে লেগে রয়েছে মাটির গন্ধ, সবুজ অরণ্যের চাদর। আর সেই কারণেই বোধ হয় আজও সেখানে বসবাস প্রাচীন রাপাহানক জনগোষ্ঠীর (Rappahannock Tribe) মানুষদের। এবার ভার্জিনিয়ার এই প্রাচীন ভূমিপুত্রদের হাতেই তুলে দেওয়া হল ভার্জিনিয়ার (Virginia) পবিত্র অরণ্যের অধিকার।
ভার্জিনিয়ায় রাপাহানক জাতির বসবাস ঠিক কবে থেকে, তার কোনো প্রামাণ্য তথ্য নেই। তবে লোককথা অনুযায়ী, প্রায় হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে রাপাহানক নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করে আসছে এই উপজাতি। ভার্জিনিয়ার অরণ্য, নদী এবং পাহাড়ই তাঁদের সরবরাহ করত বেঁচে থাকার সমস্ত রসদ। তবে সমস্যার সূত্রপাত হয় সপ্তাদশ শতকের শুরুর দিকে। ততদিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পা ফেলেছে ইংরেজরা।
স্বাভাবিকভাবেই ভার্জিনিয়ার মনোরম পরিবেশের দিকে নজর পড়েছিল ব্রিটিশ শাসকদের। ১৬০৮ সালে সেখানে বসতি স্থাপন করার উদ্যোগ নেন ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন জন স্মিথ। ক্রমে শুরু হয় ‘সভ্য’ ব্রিটিশদের সঙ্গে রাপাহানক উপজাতির সংঘাত। জন্মভূমির অধিকারের জন্য বীরত্বের সঙ্গেই লড়েছিলেন রাপাহানকরা। তবে প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে থাকা ব্রিটিশদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেননি তাঁরা। ১৬৬০-এর দশকে চেসাপিক কনজারভেন্সি অনুসারে রাপাহানক উপজাতির মানুষদের নদী তীরবর্তী অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণভাবে বাস্তুচ্যুত করে তৎকালীন শাসকরা। ভার্জিনিয়ার অন্যত্র ঘন অরণ্যে বাধ্য হয়েই আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা।
পরবর্তী আমেরিকার স্বাধীনতার পর, সংরক্ষণের তাগিদে সেই অরণ্যকেও ঘোষণা করা হয়েছিল জাতীয় উদ্যান হিসাবে। ফলে, সার্বিকভাবেই যেন মাটির অধিকার হারিয়েছিলেন আসল ভূমিপুত্ররা। অবশ্য, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে রাপাহানকদের জীবনযাপনের ধরনও। অরণ্যের ওপর নির্ভরশীলতাও কমেছে একইভাবে। তা সত্ত্বেও অরণ্যের অধিকারের জন্য বিগত কয়েক দশক ধরেই লড়াই চালিয়ে এসেছিলেন তাঁরা। এবার শেষ পর্যন্ত জয় মিলল সেই লড়াই-এ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিসের সিদ্ধান্তে, তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হল ৪৬৫ একর অরণ্যের অধিকার।
আরও পড়ুন
ভেনেজুয়েলার হারাতে-বসা অরণ্যকে বাঁচাচ্ছেন উপজাতি মহিলারা
উল্লেখ্য, এই অরণ্যই ছিল রাপাহানক উপজাতির পবিত্র অরণ্যে। ঈশ্বরের আরাধনা থেকে শুরু করে কিশোর-তরুণ শিকার ও আদিবাসী ভাষার শিক্ষাপ্রদান— সপ্তাদশ শতকের আগে সবটাই হত এখানে। ফলে, জায়গাটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব যথেষ্ট। আগামীদিনে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ইতিহাস ও সংস্কৃতি মেনেই আরাধনাগৃহও তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন রাপাহানক সম্প্রদায়ের মানুষরা। যা ইতিমধ্যেই অনুমোদন পেয়েছে প্রশাসনের থেকে। এর আগে চলতি বছরের শুরুতেই বড়ো জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাচীন জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষরা। এবার রাপাহানকদের জয় যেন আরও একবার মনে করিয়ে দিল সেই কথাই…
আরও পড়ুন
৫০০ একর অরণ্য প্রত্যার্পণ উপজাতিদের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বিষাক্ত জলের বন্যায় ভেসে গিয়েছে গ্রাম, বিপন্ন ব্রাজিলের উপজাতিরা