বিগত কয়েকদিন ধরেই ব্যাটিংয়ে পুরনো ঝাঁঝ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না মহেন্দ্র সিং ধোনির। চোখ ধাঁধানো ক্যাচ, অসাধারণ কিছু ওভারবাউন্ডারির পরেও, সেই সিগনেচার ফিনিশিংয়েও কোথাও যেন কমতি থেকেই যাচ্ছেই ধোনির। পাশাপাশি পর পর তাঁর অধিনায়কত্বে পর পর তিন ম্যাচে হার চেন্নাইয়ের। যা ধোনির ক্রিকেট জীবনে বিরল। ধোনির এই অফ-ফর্মের জন্যই এবার তাঁর শিশুকন্যা পেলেন ধর্ষণের হুমকি।
বছর ছয়েক আগের কথা। তখন ক্রিকেট বিশ্বকাপের মহড়া চলছে নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায়। অন্যদিকে অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় দলের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির স্ত্রী। সুখবরের অপেক্ষা না করেই উড়ে গেলেন ভিন দেশে। কন্যা সন্তানকে চোখের দেখা দেখারও সুযোগ হয়নি তাঁর। শুধু ফোনে জানতে পেরেছিলেন বাবা হওয়ার কথা। জানিয়েছিলেন, দেশের হয়ে কর্তব্য পালন করাই প্রথম কাজ।
সেদিন সদ্যোজাত কন্যা সন্তানকে ছেড়ে ক্যাপটেন কুল বেছে নিয়েছিলেন ক্রিকেটকেই। দ্বিতীয়বার ভাবেননি অন্যকথা। সেই ক্রিকেটই ফিরিয়ে দিল তাঁর প্রতিদান। গত পরশুদিন কলকাতার সঙ্গে ম্যাচ হারার পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রান্ত হন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক। অশ্রাব্য গালিগালাজ দিয়েই শুরু হয়েছিল প্রথমটা। তারপর সেখানেই উঠে আসে তাঁর সন্তানের প্রসঙ্গও। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকিও কেউ কেউ লিখলেন সেখানে।
যে ক্রিকেটকে কেন্দ্র করেই এত উন্মাদনা, হার-জিতের লড়াই। সেই ক্রিকেট কি এমনটাই শেখায় আমাদের? প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে সেখানেই। ক্রিকেটারদের ফর্ম ঠিক না থাকলেই ব্যক্তিগত আক্রমণ, আজ যেন খুবই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। প্রতিবছরই আইপিএল এসে গেলে যেভাবে ট্রোল হন অশোক দিন্দা, রান না পাওয়ার পর যেমন আক্রান্ত হন দীনেশ কার্তিক, ঠিক তেমনই। এতে যেন আশ্চর্য হওয়ারই আর কিছুই থাকছে না। স্পোর্টিং-স্পিরিট উধাও। ক্রিকেটের ডিকশেনারি থেকে উড়েই গেছে ‘হার’ শব্দটিও।
ক্রিকেটের কথা সরিয়ে রাখলেও প্রশ্ন থেকে যায় মানসিকতা নিয়ে। গত কয়েকদিন ধরেই উত্তাল হয়ে আছে দেশের পরিস্থিতি। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেই চলেছে ভারতে। কিন্তু তার পরিণতি? কোনো ধর্ষণই হয়নি বলে দাবি করছে প্রশাসন। অন্যদিকে গ্রেপ্তার হচ্ছেন সাংবাদিকরা। ‘ধর্ষণ’-মানসিকতাকে কোনোভাবে প্রশ্রয়ই কি দেওয়া হচ্ছে না তাতে? আজ যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে শুধু ক্রিকেট ম্যাচের নিরিখে। কাল সামান্য বিষয়েও নারী নির্যাতনে হাত কাঁপবে না তাঁর। শুধু ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের কন্যা বলেই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে একটা অন্ধকার সময়েরই। সেখানেই থেকে যাচ্ছে আশঙ্কা। এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক স্তরে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা, তা এখনও জানা যায়নি। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, এই ধরণের মানসিকতার বদল ঘটবে কবে? নাকি এই প্রবৃত্তি এভাবেই প্ররোচনা যুগিয়ে যাবে অন্যদেরও?
আরও পড়ুন
ধর্ষণ-মানচিত্র বুনতে ঘুরেছেন গোটা দেশ; ‘সত্যান্বেষী’ প্রিয়াঙ্কা দুবে ও এক যন্ত্রণার আখ্যান
Powered by Froala Editor