হাসপাতালের গা-ঘেঁষা একটি খাবারের দোকান। টিনের ছাউনি করা ছোট্ট কিয়স্ক। ঝোলানো হোর্ডিং-এ বড়ো বড়ো লেখা ‘রুটি ব্যাঙ্ক’ (Roti Bank)। ঝাড়খণ্ডের রাঁচির (Ranchi) রাজেন্দ্র ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে গেলেই চোখে পড়বে এই দৃশ্য। খাবার দোকানের এমন অদ্ভুত নাম দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য সবারই। কিন্তু বিশেষত্ব কী এই দোকানের? কেনই বা এমন নাম নির্বাচন?
বছর দুয়েক আগের কথা। মহামারী শুরু ঠিক প্রাক্কালে এই ছোট্ট কিয়স্ক খুলেছিলেন রাঁচির ৪২ বছর বয়সি ব্যবসায়ী বিজয় পাঠক। উদ্দেশ্য বিনামূল্যে ফুটপাথবাসীদের মুখে অন্নদানা তুলে দেওয়া। প্রাথমিকভাবে শ’খানেক মানুষের জন্য রুটি-তরকারির ব্যবস্থা করতেন তিনি। তবে মাস ঘুরতে না ঘুরতেই বদলে যায় চারপাশের পরিস্থিতি। লকডাউন ঘোষণা হয় দেশজুড়ে। সেই থেকে টানা আড়াই বছর ধরে প্রতিদিন প্রায় আড়াইশো জনের খাবারের বন্দোবস্ত করে চলেছেন বিজয় পাঠক।
যদিও এই পরিকল্পনা তাঁর আজকের নয়। বছর ১৬ আগের কথা। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে এই হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছিলেন তাঁর বাবা। কাজেই, প্রায় প্রতিদিনই হাসপাতালে আসতে হত তাঁকে। এইসময়ই তাঁর নজরে আসে দরিদ্র মানুষদের অসহায়তার ছবি। হাসপাতালের বাইরে ফুটপাথবাসীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। পাশাপাশি হাসপাতালে প্রান্তিক মানুষদের ভিড়ও লেগেই থাকে। যাঁদের অধিকাংশই আর্থিক পিরামিডের নিচের তলার মানুষ। প্রিয়জনের চিকিৎসার খরচের ধাক্কা সামলে, সারাদিন হয়তো দানাটুকুও মুখে ওঠে না তাঁদের। বিজয় ঠিক করেছিলেন, একদিন বিনামূল্যে খাবার তুলে দেবেন এই মানুষগুলোর হাতে। তখনও পর্যন্ত নিজের ব্যবসাকে ভালোভাবে দাঁড় করাতে পারেননি বিজয়। ফলে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে সময় লেগে যায় প্রায় ১৪ বছর।
গত ২০২০ সালের মার্চ মাসের ১ তারিখে ‘রুটি ব্যাঙ্ক’ খোলেন বিজয়। লকডাউন, মহামারীর পরিস্থিতি এত ভয়াবহ আকার নেবে, তখন তার বিন্দুমাত্রও আঁচ পাননি তিনি। তবে মাস খানেকের মধ্যেই তাঁর এই উদ্যোগ ত্রাতা হয়ে দাঁড়ায় অসংখ্য অসহায় মানুষের।
নিজের ব্যবসার লভ্যাংশ থেকেই প্রকল্পের খরচ বহন করেন বিজয়। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর এই উদ্যোগের সম্পর্কে জানতে পেরে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন অনেকেই। কেউ তাঁকে দান করেন দানাশস্য, আবার কেউ শাক-সবজি। তাছাড়াও বিয়েবাড়ি বা অন্য কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে বেঁচে যাওয়া খাদ্যদ্রব্যও অনেকে তুলে দেন বিজয়ের হাতে। রুটি ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই পথবাসী মানুষদের সেসব বিতরণ করেন বিজয়। বিজয়ের এই মানবিক উদ্যোগ যেন মনে করিয়ে দেয় নরনারায়ণ সেবা, ভারতের আদি সংস্কৃতির কথা…
Powered by Froala Editor