মানুষের বদলে ভেড়ার মাথা, অদ্ভুতদর্শন স্ফিংসের নেপথ্যে লুকিয়ে কোন কাহিনি?

সিংহের দেহ, অথচ তার মাথাটা মানুষের। আবার পিঠে রয়েছে ঈগলের ডানা। স্ফিংস। মূলত গ্রিক পুরাণেই জন্ম এই কাল্পনিক প্রাণীটির। তবে গ্রিসের পরিধি ছাপিয়ে স্ফিংস ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা মিশরে। এমনকি পিরামিডের পাশাপাশি স্ফিংসের মূর্তিই আজ হয়ে উঠেছে মিশরের (Egypt) অন্যতম প্রত্ন-প্রতীক। কিন্তু মানুষ কিংবা নিদেনপক্ষে সিংহের বদলে যদি ভেড়ার মাথা বসানো হয় স্ফিংসের (Sphinx) কাঁধে?

মিশরের বুকেই অস্তিত্ব রয়েছে এমন আশ্চর্যদর্শন স্ফিংসের। যদিও মাত্র কয়েক বছর আগেই তার উপস্থিতি টের পায় মানুষ। 

২০২১ সাল। লুক্সর অর্থাৎ প্রাচীন মিশরের রাজধানী থিবসে অবস্থিত কার্নাক মন্দিরের দক্ষিণে খননকার্যের সময় প্রকাণ্ড একটি ভেড়া-মুখী স্ফিংসের সন্ধান পান গবেষকরা। প্রাচীন মিশরীয় সূর্য-দেবতা আমুন-রা-এর এই মন্দির তৈরি হয়েছিল আনুমানিক ৪০০০ বছর আগে। তবে পরবর্তী দু'হাজার বছর ধরে একাধিকবার ভাঙা-গড়ার মধ্যে দিয়ে গেছে এই মন্দির। ভেড়া-মুখী স্ফিংসটির গঠন দেখেও বোঝা যায়, সেটি নির্মিত হয়েছিল মূল মন্দির নির্মাণের বেশ খানিকটা পরে। গবেষকদের অভিমত, প্রায় ৩০০০ বছর আগে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দে তৈরি হয়েছিল এই স্ফিংস। 

তবে এখানেই শেষ নয়। এই আবিষ্কারের পর কার্নাকের মন্দির প্রাঙ্গণে মূল স্ফিংসটির দক্ষিণে সমান দূরত্বে অবস্থিত আরও দুটি দৈত্যাকার স্ফিংস মূর্তির সন্ধান পান প্রত্নতাত্ত্বিকরা। সেগুলির মাথা ভেড়ার হলেও, তার ওপর ছিল সাপের ফণার আচ্ছাদন। তাছাড়া এই স্ফিংস দুটি নির্মিত হয়েছিল তুলনামূলকভাবে অনেক পরে। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর মিশরের সিংহাসনে বসেন তাঁরই রাজসভার অন্যতম বিজ্ঞানী, গণিতবিদ এবং সঙ্গীতজ্ঞ টলেমির বংশধররা। ৩২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে শুরু করে আনুমানিক ৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মিশর শাসন করে এই রাজবংশ। কার্নাকের দক্ষিণতম স্ফিংস দুটির নেপথ্যে রয়েছে তাঁরাই। এমনটাই মনে করেন প্রত্নতাত্ত্বিকদের একাংশ। আবার অনেকের মতে আলেকজান্ডারের বিশ্বজয়ের আগেই তৈর হয়েছিল এই স্ফিংসগুলি। যদিও এখনও পর্যন্ত তার সুস্পষ্ট প্রমাণ মেলেনি কোনো। কিন্তু কেন এমন আশ্চর্য রূপ দেওয়া হয়েছিল এই স্ফিংসগুলিকে?

মিশরের স্ফিংসে মূলত নিজেদের মুখের আদলে প্রতিকৃতি তৈরি করতেন মিশরীয় ফ্যারাওরা। মনে করা হত, এই স্পিংসগুলি নরকের দ্বাররক্ষক। মূলত এ-ধরনের ভাস্কর্য তৈরি হত পিরামিডের নিকটবর্তী অঞ্চলে। অন্যদিকে মন্দির-প্রাঙ্গণে স্ফিংস তৈরি করার কারণে সেগুলির মাথা প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল ভেড়ার মাথা দিয়ে। সবমিলিয়ে একই সঙ্গে এই স্ফিংস হয়ে ওঠে দেবতাকে দেওয়া অর্ঘ্য এবং ফ্যারাও-এর বীরত্বের প্রতীক। তবে শুধুমাত্র এই তিনটি স্ফিংসই নয়, কার্নাকের আশেপাশে ছড়িয়ে রয়েছে আরও বেশ কিছু স্ফিংস। অবশ্য তাদের শরীরে বিশেষত্বের ছাপ নেই কোনো। তবে একাধিক স্ফিংসের উপস্থিতির কারণে 'স্ফিংস অ্যাভিনিউ পরিচিতি পেয়েছে এই অঞ্চল...

Powered by Froala Editor

Latest News See More