কখনো থুত্থুরে বুড়ো। আবার ভোল পাল্টে গৃহ পরিচারিকা। বিকেল হতেই তিনি অন্ধ মহিলার 'রোলে' ঢুকে যাবেন। খুঁড়ে খুঁড়ে বের করবেন যাবতীয় তথ্য। ধীরে ধীরে ফাঁস হবে জটিল রহস্যজাল। পুলিশের কাছে কিংবা 'মক্কেল'কে পাঠিয়ে দেবেন অপরাধীর নাম।
ইনি কিন্ত ফেলুদা, ব্যোমকেশ বা মিতিনমাসি নন। রক্তমাংসের মানুষ। ভারতের প্রথম মহিলা প্রাইভেট ডিটেকটিভ। মহারাষ্ট্রের রজনী পণ্ডিত। প্রায় প্রায় ২৩ বছরের কর্মজীবনে তাঁর নজরে ধরা পড়েছে বহু অপরাধী। জেলের ঘানি টানতে হয়েছে বিস্তর চোর-ডাকাত-খুনেকে।
গোয়েন্দাগিরির শুরুটা হয়েছিল কলেজ জীবনে। এক বান্ধবীকে দেহব্যবসার চক্র থেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন তিনি। ছোটবেলায় গুলে খেয়েছিলেন,শার্লক-মার্পল-পোয়ারো। তাঁর মতে, ‘গোয়েন্দা হতে গেলে কোনো ডিগ্রির দরকার হয় না। চাই শুধু অধ্যাবসায়।’ নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় মুম্বাই শহরে খুললেন নিজের এজেন্সি। এখন প্রায় শহরজোড়া নামডাক এই সংস্থার। প্রচুর মহিলা ডিটেকটিভ এখন প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন রজনীর থেকেই।
গোয়েন্দাদের যে প্রাণটি হাতে করে কাজে নামতে হয়, তা বলাই বাহুল্য। রজনীর সবথেকে কঠিন 'কেস' ছিল একটি জোড়া খুনের মামলা। ঠান্ডা মাথায় এক মহিলা গুপ্তঘাতক লাগিয়ে নিজের স্বামী আর ছেলেকে বেমালুম নিকেশ করে দিয়েছিলেন। এমন সুচারুভাবে অ্যালিবাই সাজানো যে, হাল ছেড়ে দিয়েছিল পুলিশ। কিন্ত ভারতের মার্পল লেগে রইলেন। মহিলার গৃহপরিচারিকা সেজে। প্রায় হাতে নাতে ধরেও ফেলেছিলেন তাকে। কিন্ত কোনো কারণে ফাঁস হয়ে যায় ছদ্মবেশ। গুপ্তঘাতককে ডাকার আগেই পালিয়ে আসেন রজনী। উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ জমা দিতেই, গ্রেপ্তার হল খুনি।
প্রাইভেট ডিটেকটিদের গতিবিধি সাধারণত আইনের বাইরে। পুলিশ তাঁদের মোটে ভালো চোখে দেখে না। অনেক সময়েই মক্কেল খোদ অপরাধজগৎ থেকে উঠে আসা কোনো ব্যক্তি। সুতরাং বেআইনি তথ্য চালান থেকে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের উপর নজরদারি - এমন বেআইনি কাজ করতে গেলে 'টিকটিকি'দেরই প্রয়োজন। ধরা পড়লে, শাস্তি সাধারণ চোরের মতোই। উদ্দেশ্য মহৎ হলেও।
রজনীও বেশ কয়েকদিন কাটিয়েছেন জেলে। ফোন থেকে গোপন তথ্য বেআইনি ভাবে পাচার করার অভিযোগে। পুলিশ তাঁর কার্যকলাপকে মোটে ভালো চোখে দেখেনি। দেখবেই বা কেন? ডিটেকটিভ উপন্যাসের গোয়েন্দা আর পুলিশের অম্লমধুর কিন্ত সহযোগী সম্পর্ক, বাস্তবে নেই বললেই চলে। বিশেষত গোয়েন্দাটি যখন লিঙ্গচিহ্নে নারী। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তাই প্রশ্ন ওঠে পারদর্শিতার। কিন্ত শত শত্তুরের বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে রজনী পণ্ডিত ধাওয়া করছেন অপরাধীদের। বিয়ে করেননি। গোয়েন্দাদের 'মায়া' রাখতে নেই। নিজের কীর্তিকলাপ নিয়ে লিখেছেন দুটি বই। ভূষিত হয়েছেন বহু পুরস্কারে। এমনকি তাঁর জীবন অবলম্বনে তৈরি হবে চলচ্চিত্র।
মিতিনমাসি-মিস মার্পলরা যে আর শুধু বইয়ের পাতায় আটকে নেই!