‘মিশন মঙ্গল’ ছবিতে মার্স অরবিটার মিশনের হাসিখুশি প্রোজেক্ট ডিরেক্টর বিদ্যা বালানকে মনে আছে নিশ্চই অনেকেরই। ভারতের প্রথম সফল মঙ্গল-অভিযানের নেপথ্যে মহিলাদের ভূমিকার কথা বিদ্যার হাত ধরে উঠে এসেছিল সেলুলয়েডের পর্দায়। কিন্তু বাস্তবে বিজ্ঞানের জগতে মহিলাদের এই জার্নিটা সম্ভব হয়নি একদিনে। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেকগুলো নাম। কর্ণাটকের প্রথম মহিলা ইঞ্জিনিয়ার, রাজেশ্বরী চট্টোপাধ্যায় তেমনই এক নাম।
১৯২২ সালে কর্ণাটকে জন্ম তাঁর। প্রাথমিক পড়াশোনা সেখানেই শেষে করে ভেবেছিলেন সঙ্গী করবেন ইতিহাসকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিজিক্স এবং ম্যাথেমেটিক্স হল তাঁর দোসর। ব্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করবার পর পেয়ে গেলেন স্কলারশিপ। ভারতের প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জমানা তখন। ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মাস্টার্স ডিগ্রির জন্যে দিল্লির সরকারের দ্বারা মনোনীত হল তাঁর নাম। আমেরিকায় পাড়ি জমালেন তিনি।
ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যান্ডার্সে আট মাসের ট্রেনিং সম্পন্ন করবার পর লাভ করলেন পিএইচডি ডিগ্রি। ভারতে ফিরে এসে হলেন IISC-র ডিপার্টমেন্ট অফ ইলেকট্রিকাল কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ফ্যাকাল্টি মেম্বার। সেখানে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক থিয়োরি, ইলেকট্রন টিউব সার্কিট, মাইক্রোওয়েভ টেকনোলজি, রেডিও ইঞ্জিনিয়ারিং-এর উপর ছিল তাঁর শিক্ষাদান। পরবর্তীতে এই ইনস্টিটিউটেরই প্রফেসর শিশির কুমার চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। যৌথভাবে তাঁরাই প্রথম এদেশে মাইক্রোওয়েভ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর উপর গবেষণার কাজ শুরু করেন। প্রতিষ্ঠা করেন গবেষণাগার। পরবর্তীকালে ইলেকট্রিকাল কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
১৯৮২-তে অবসরগ্রহণের পরেও তাঁর সঙ্গে বিজ্ঞানের সম্পর্ক ছিল অটুট। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে মহিলাদের বিজ্ঞান এবং কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা বৃদ্ধিতে তিনি ছিলেন সদা সচেষ্ট। জীবনের শেষ ক’টি দিনেও তিনি ছিলেন একইরকম প্রাণবন্ত, কর্মব্যস্ত। ২০১০ সালে প্রয়াত হন শিক্ষাজগতের এই নক্ষত্র। তবু মৃত্যুর পরেও বিস্মৃত হননি তিনি। বরং থেকে গেছেন কর্মজগতে নারীদের উত্থানের অন্যতম পুরোধা হিসেবেই...
Powered by Froala Editor