কলকাতা, হায়দ্রাবাদ, বেঙ্গালুরুর মতো মেট্রো শহরগুলির পাশাপাশি ভারতের বহু প্রান্তিক অঞ্চলেও আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে ভূগর্ভস্থ জলের (Ground Water Level) মাত্রা। গত বছরই এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় প্রকাশ্যে এসেছিল এই তথ্য। সতর্ক করা হয়েছিল, আর কয়েক বছরের মধ্যেই তীব্র জলসংকট দেখা যেতে পারে দেশজুড়ে। কিন্তু তারপরেও অনিয়ন্ত্রিতভাবেই ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহৃত হচ্ছে কৃষিক্ষেত্রে।
আজ যে-কথা প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন গবেষণাপত্রে, এই চার দশক আগেই এই পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেছিলেন রাজস্থানের আলওয়ার জেলার বাসিন্দা রাজেন্দ্র সিং (Rajendra Singh)। অবশ্য স্থানীয়দের কাছে তিনি পরিচিত ‘ওয়াটারম্যান’ (Waterman) নামেই। বিগত চার দশক ধরে ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক জলাশয়ের স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
বর্তমানে রাজস্থান নিবাসী হলেও, রাজেন্দ্রর জন্ম উত্তরপ্রদেশের মিরাটে। ১৯৮০ সালে শিক্ষা বিভাগে চাকরি পেয়ে তিনি স্থানান্তরিত হন রাজস্থানের জয়পুরে। সে-সময়ই একটি বিশেষ বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁর। প্রাচীনকাল থেকেই রাজস্থানে কৃষিক্ষেত্রে সেচের জল সরবরাহ করা হত জোহাদের মাধ্যমে। আদতে আমরা যাকে খাল বলে চিনি, সেটাই রাজস্থানের স্থানীয় ভাষায় জোহাদ। তবে মরু অঞ্চল হওয়ায় এই খাল হয় খুবই সংকীর্ণ। রাজেন্দ্র লক্ষ্য করেন, প্রাচীন এই ঐতিহ্যবাহী খালের ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে রাজস্থানে। বরং, কুয়ার জলই সেখানকার মানুষ ব্যবহার করছেন কৃষিক্ষেত্রে।
তাতে চাষের অসুবিধা না হলেও, ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে কুয়োর জল। রাজস্থান এমনিতেই বৃষ্টিহীন অঞ্চল। পাশাপাশি ক্রমশ কুয়োর জল উত্তোলনের ফলে, ভূগর্ভস্থ জলতল হ্রাস পাচ্ছে সেখানে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় ১৯৮৪ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে রাজেন্দ্র পথে নামেন মানুষকে সচেতন করতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও কর্মকর্তাদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘তরুণ ভারত সংঘ’ নামের এক অলাভজনক সংস্থা। শুধু সচেতনতা-প্রচারই নয়, রাজস্থানজুড়ে ছড়িয়ে থাকা জোহাদগুলিকে সারিয়ে তোলাই ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য।
১৯৮৫ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত রাজেন্দ্র এবং তাঁর সংস্থা প্রাণ ফিরিয়েছে রাজস্থানের ৬৫০টি গ্রামের ৩ হাজারেরও বেশি জোহাদে। তাতে যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাবও দেখা গেছে ভূগর্ভস্থ জলের স্তরে। তবে ‘ওয়াটারম্যান’-এর কর্মক্ষেত্র শুধু রাজস্থানই নয়, বরং ছড়িয়ে রয়েছে গোটা ভারতজুড়েই। গঙ্গার ওপর তেহরি ড্যাম তৈরির সময়ও প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন বড়ো বাঁধ তৈরিতে গতিরুদ্ধ হয় নদীর। ফলে বেশি পলি পড়ে নদীর অববাহিকায়। তৈরি হয় শৈবাল। তাতে একদিকে যেমন জলের গুণগত মান নষ্ট হয়, তেমনই প্রভাবিত হয় বাস্তুতন্ত্রও। না, তেহরি ড্যামের নির্মাণ আটকাতে পারেননি তিনি। তবে আজও বিভিন্ন অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রমন ম্যাগসেসে পুরস্কারপ্রাপ্ত রাজেন্দ্র…
Powered by Froala Editor