ঘুমপাড়ানি মাসিপিসির বাড়ি কি রাজস্থানে? নাহলে পুরখারামের (Purkharam) চোখে এত ঘুম আসে কোথা থেকে? কাজ করতে করতে আচমকাই ঘুমে ঢলে পড়ে চোখ। তারপর তাঁকে জাগায় কার সাধ্য! ঘুম ভাঙতে কেটে যায় প্রায় ২০-২৫ দিন। অনেকে তাঁকে ডাকছেন বাস্তবের ‘কুম্ভকর্ণ’ বলে। কিন্তু ইচ্ছাকৃত এভাবে ঘুমিয়ে পড়েন না পুরখারাম। এক জটিল রোগের শিকার তিনি। যার নাম ‘অ্যাক্সিস হাইপারসোমনিয়া’ (Axis Hypersomnia)। এবং এই ঘুমের জন্য প্রবল সমস্যায় পড়েছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন।
আজকের যুগের দ্রুততার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে ঘুম উড়েছে বহু মানুষেরই। ‘ইনসমনিয়া’-র শিকারও অনেকেই। ছয়-সাত ঘন্টার পর্যাপ্ত ঘুমও যেন এক ধরনের বাহুল্যতায় পরিণত হয়েছে। আর সেখানে পুরখারামের জীবনের সবচেয়ে বড়ো অভিশাপের নাম—‘ঘুম’। তাঁর বাড়ি রাজস্থানের নাগাউর জেলার ভাদোয়া গ্রামে। প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি ‘হাইপারসোমনিয়া’য় আক্রান্ত। প্রথম দিকে ঘুমোতেন টানা সাত-আট দিন। ক্রমে বাড়তে থাকে তার পরিমাণ। এখন একবার ঘুমিয়ে পড়লে ২০-২৫ পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলে না তাঁর। তারপর হয়তো পাঁচ-ছয় দিনের ‘স্বাভাবিক’ জীবনযাপন করে আচমকাই একদিন ঘুমিয়ে পড়েন কোনো এক জায়গায়। এভাবেই বছরের প্রায় ৩০০ দিন ঘুমিয়েই কাটে বছর ৪২-এর পুরখারামের।
কিন্তু কী এই ‘হাইপারসোমনিয়া’? সহজে বলতে গেলে, এই রোগে মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ঘুমোয় কিংবা যখন তখন ঘুমিয়ে পড়তে পারে। সাধারণ ঘুম কম হওয়া বা শারীরিক ক্লান্তির সঙ্গে এর তফাৎ রয়েছে। ‘ইনসোমনিয়া’-র মতো এও এক ধরনের ‘স্লিপিং ডিসঅর্ডার’। তবে কাজ করে বিপরীত দিকে। স্নায়ুতন্ত্রের কোনো সমস্যা, মানসিক অবসাদ ও অন্যান্য কারণে দেখা দিতে পারে এই রোগ। বিশ্বের ৪ থেকে ৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে রয়েছে এর প্রবণতা। ‘হাইপারসোমনিয়া’-র আক্রান্ত মানুষরা অত্যন্ত ধীরগতিতে কথা বলেন, তাঁদের ভাবনাচিন্তাও কাজ করতে পারে না দ্রুত গতিতে। চলে যায় খাওয়ার ইচ্ছা। ‘হ্যালুসিনেশন’-এর সমস্যাও এই রোগের একটা ক্ষতিকারক দিক।
‘হাইপারসোমনিয়া’-র অনেকগুলি বিভাগ আছে। সবকটিই যে সমান বিপজ্জনক, তা নয়। তবে পুরখারামের বিষয়টি অস্বাভাবিক রকমের আলাদা। তার মতো ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতা সারা বিশ্বে প্রায় বিরল। একটি ছোট মুদিখানা দোকান থাকলেও নিজে অবশ্য বসতে পারেন না অধিকাংশ সময়ই। কিংবা মাসের যে চার-পাঁচদিন সেখানে থাকেন, তাঁর পরিবার তীক্ষ্ণ নজরে রাখে সব সময়। এর আগে বহুবার দোকানে ঘুমিয়ে পড়েছেন তিনি। সেই সময় নাকি কোনোভাবেই ঘুম ভাঙানো যায় না তাঁর। ফলে ঘুমন্ত অবস্থাতেই তাঁকে আনা হয়েছে সেখান থেকে। স্নান করা, খাওয়াদাওয়া সমস্ত কিছু চলে ওভাবেই। পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে স্ত্রী লিছমি দেবী ও মা কানবারি দেবীর উপরে। ফলে সামাজিক বা ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু নেই পুরখারামের।
আরও পড়ুন
১১ দিন না ঘুমিয়ে বিশ্বরেকর্ড, কী পরিণতি হয়েছিল শেষমেশ?
প্রথমদিকে পুরখারামের এই অবস্থায় অত্যন্ত ভয় পেত তাঁর পরিবার। পরে ডাক্তারের সাহায্যে বুঝতে পারেন সমস্যাটি। কিন্তু সমাধান? ধারাবাহিকভাবে চিকিৎসা চলছে তাঁর। যদিও সুরাহা মিলেছে বললে ভুল বলা হবে। এমনিতেও ‘হাইপারসোমনিয়া’-র কোনো যথাযোগ্য চিকিৎসা নেই। মূলত জীবনযাত্রা পরিবর্তনের দিকেই বেশি জোর দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু পুরখারামের জীবন বলতে তো মাসে ৫-৬ দিন। চিকিৎসার পরেও কিন্তু ঘুম কমেনি তাঁর। বরং জেগে থাকার সময়ে এক অসহ্য মাথা যন্ত্রণায় ভুগতে থাকেন তিনি।
আরও পড়ুন
টানা ১১ বছর ঘুম! চমকে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ তরুণী
সব মিলিয়ে প্রায় এক অভিশপ্ত জীবন কাটাচ্ছে রাজস্থানের এই পরিবার। ঘুম যেখানে বহু মানুষের স্বপ্ন, সেখানে পুরখারাম চাইছে জেগে থাকতে। একই প্রার্থনা লিছমি দেবী ও কানবারি দেবীর। যেন ঘুম ভাঙে পুরখারামের, যেন স্বপ্নের দুনিয়া থেকে তিনি ফিরে আসেন বাস্তবের মাটিতে।
Powered by Froala Editor