ধরুন, পাড়ার মুদিখানার দোকানে গেলেন কিছু জিনিস কিনতে। কিন্তু গিয়ে দেখলেন, দোকান বন্ধ। দু-একদিন নয়, একটানা ২৫ দিন ধরে দোকান বন্ধই রয়েছে। দোকানিরও দেখা নেই। কারণ তিনি তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। একটানা ২৫ দিন! এতদিন কেউ ঘুমাতে পারেন নাকি? না, কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু রাজস্থানের এই দোকানি এক বিরল রোগে আক্রান্ত। আর তাই প্রতি মাসে একটানা ২৫ দিন পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকেন তিনি। অবশ্য যে ৫ দিন জেগে থাকেন, তখনও খুব বেশি কাজ করতে পারেন না। সবসময় এক ধরণের ক্লান্তি ঘিরে থাকে।
রামায়ণের কুম্ভকর্ণের কথা তো সকলেরই জানা। ব্রহ্মার কাছ থেকে বর চাইতে গিয়ে তিনি গণ্ডগোল বাঁধিয়েছিলেন। আর তার ফলেই একটানা ৬ মাস ঘুমোতেন এবং ১ দিন জেগে থাকতেন। আর রাজস্থানের নাগাউর জেলার পরখরামের জীবনটাকে এমন করে তুলেছে এক রোগ। অ্যাক্সিস হাইপারসোমনিয়া। জন্ম থেকে অবশ্য এমন ছিলেন না তিনি। ২৩ বছর আগে প্রথম তাঁর এই রোগ ধরা পড়ে। এরপর অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই লাভ হয়নি। প্রতিবেশীরা অনেকে মজা করে ডাকেন ‘বাস্তবের কুম্ভকর্ণ’। কিন্তু পরখরামের জীবনটা আদৌ মজার নয়।
প্রথম প্রথম একটানা ৭-৮ দিন ঘুমিয়ে থাকতেন পরখরাম। তারপর ঘুম ভেঙে গেলে অবশ্য একটানা ২-৩ দিন জেগেও থাকতেন। সেই থেকেই শুরু হয়েছে চিকিৎসা। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, ততই আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন পরখরাম। এখন একবার ঘুমিয়ে পড়লে ২২৫ দিনের আগে ঘুম ভাঙে না। আর ঘুম ভাঙলেও শুরু হয় মাথা যন্ত্রণা এবং পেশি-বেদনা। তারপর কাজ করতে করতেই আবার কখন ঘুমিয়ে পড়েন, নিজেও টের পান না। আর ঘুমন্ত পরখরামকে স্নান-খাওয়া করিয়ে দেন তাঁর মা এবং স্ত্রী। তাঁদের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। পরখরাম তো তাও ঘুমিয়ে থাকলে কিছু টের পান না। অবশ্য তিনজনেই এখনও আশা করেন, একদিন চিকিৎসায় কাজ দেবে। আবারও সুস্থ হয়ে উঠবেন পরখরাম। কিন্তু চিকিৎসকরা আজও সেই অন্ধকারেই।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
৪২ হাজার বছর পর প্রাগৈতিহাসিক কৃমির ঘুম ভাঙালেন বিজ্ঞানীরা