বয়স মাত্র ১৭ বছর। আর এই বয়সেই আস্ত একটা কারখানা তৈরি করে ফেলেছে রাজস্থানের আদিত্য বানজার। তবে নিছক বাণিজ্যিক লাভের জন্য নয় এই কারখানা। বরং ক্রমাগত বেড়ে চলা প্লাস্টিক দূষণকে (Plastic Pollution) মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে তৈরি এই কারখানা। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করে এনে তাই দিয়ে বস্ত্র (Textile) তৈরি হয় এই কারখানায়। আর এভাবে গত ২ বছর ধরে প্রতিদিন প্রায় ১০ টন করে প্লাস্টিক পুণর্ব্যবহার করা হয় আদিত্যর কারখানায়।
রাজস্থানের ভিলওয়ারা শহরের বাসিন্দা আদিত্য এখন মায়ো কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। তবে এই বয়সেই পারিবারিক ব্যবসার অনেকটা দেখাশোনা করে সে। ব্যবসার বিষয়ে নিত্যনতুন প্রযুক্তির সম্বন্ধে জানতে ২ বছর আগে কাকার সঙ্গে চিনে গিয়েছিল আদিত্য। সেখানেই দেখেছিল এই অভিনব কৌশল। ফেলে দেওয়া পেট বা পলিইথিলিন টেরেপথ্যালেট প্লাস্টিক থেকেই তৈরি হচ্ছে কাপড় বোনার সুতো। এই ধরনের কারখানা দেখার পরেই আদিত্যর মনে পড়ে যায় দেশের প্লাস্টিক দূষণের সমস্যার কথা। ফিরে এসে বাবাকে জানায় তার পরিকল্পনা। ছেলের কথায় রাজিও হয়ে যান বাবা। সেইসঙ্গে জানান, কারখানার দায়িত্ব আদিত্যকেই নিতে হবে। শুধু মূলধন তাঁর নিজের।
এভাবেই গড়ে ওঠে আদিত্যর কারখানা। প্রথম প্রথম শহরের নানা প্রান্ত থেকে এবং তারপর রাজ্যের অন্যত্রও যাঁরা আবর্জনা সংগ্রহ করেন তাঁদের থেকে প্লাস্টিক কিনতে শুরু করে আদিত্য। তবে কেবল পেট গোত্রের প্লাস্টিক। অবশ্য আমাদের দেশে প্লাস্টিক আবর্জনার অধিকাংশই এই গোত্রের। জলের বোতল থেকে খাবারের প্যাকেট, সবই তৈরি হয় পেট দিয়ে। সেইসব আবর্জনা সংগ্রহ করার পর কারখানায় তারা পরিষ্কার করা হয়। এরপর ছোটো ছোটো টুকরোতে ভেঙে ফেলে তারপর তাদের গলিয়ে ফেলা হয়। এই সময় অন্যান্য পদার্থ নিষ্কাশিত হয়ে বেরিয়ে আসে একধরনের তন্তু। আর সেই তন্তুকেই পাকিয়ে সুতো তৈরি করা হয়। সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই তুলোর তৈরি সুতো মিশিয়েও দেওয়া হয়। এই কাপড় সাধারণ কাপড়ের চেয়ে অনেক বেশি টেকসই।
আপাতত আদিত্যর কারখানায় তৈরি সমস্ত কাপড় কেনে তার কাকার সংস্থা কাঞ্চন ইন্ডিয়া লিমিটেড। তারপর সেখানে কাপড়ের ডিজাইন তৈরি হয়ে চলে যায় জামাকাপড় নির্মাতাদের কাছে। তবে আগামীদিনে আরও ব্যাপক স্তরে উৎপাদন বাড়ানোর ইচ্ছা আছে আদিত্যর। কিন্তু আবর্জনা সংগ্রাহকদের থেকে প্লাস্টিক কিনতে যা খরচ হয়, তাতে বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। আদিত্য তাই প্রত্যেকের কাছে আবেদন রাখছে, তাঁরা যেন যেখানে সেখানে আবর্জনা না ফেলে তার কারখানায় যোগাযোগ করে। এভাবেই গড়ে উঠুক প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের একটি শৃঙ্খল। আর তাহলেই পরিবেশ বাঁচবে।
আরও পড়ুন
প্লাস্টিককে ঘিরেই গড়ে উঠছে নয়া বাস্তুতন্ত্র, সমুদ্রের ‘অজানা’ গল্প
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
গরম জলে গলে যাবে মুহূর্তেই, অভিনব জৈব প্লাস্টিক তৈরি বাঙালি উদ্ভাবকের