অযোধ্যায় তৈরি হচ্ছে রামমন্দির। আর তার জন্য লাগবে বিপুল পরিমাণে গোলাপি বেলেপাথর। কোথা থেকে আসবে এই বেলেপাথর, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে ধন্ধ? এবার উত্তর মিলল তার। রাজস্থানের ভরতপুর বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য থেকেই সংগৃহীত হবে এই বেলেপাথর। গোলাপি বেলেপাথর সমৃদ্ধ ভরতপুর অভয়ারণ্য থেকে শুধুমাত্র মন্দিরের জন্যই খনন করা হবে এই পাথর।
২০১৬ সাল থেকেই অভয়ারণ্যের মধ্যে এই পাথর খনন বন্ধ করেছিল রাজস্থান সরকার। উদ্দেশ্য ছিল বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তা এবং অবকাশ প্রদান। কারণ খননকার্যের একটানা শব্দ প্রভাবিত করে বন্যপ্রাণীদের। তবে তাতে বন্ধ হয়নি খনন। চোরাগোপ্তা পাথর উত্তোলন চলতই। কালো বাজারে বিক্রি হত সেসব। কিছুদিন আগেও ওই অঞ্চলে ধরা পড়েছিল গোলাপি বেলেপাথর বোঝাই ২৫টি ট্রাক।
তবে এসব জেনেশুনেও শেষ অবধি অনুমতি দিল রাজস্থান সরকার। রামমন্দির নির্মাণে যাতে ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ দিয়েই খননের অনুমতি দেওয়া হয়, কিছুদিন আগে সেই আবেদনই করেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। কেন্দ্রের থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর রাজস্থানের কংগ্রেস সরকারের থেকে জরুরি অবস্থায় অনুমতি আদায়ে অসুবিধা হয়নি খুব একটা।
জানা গেছে, ভরতপুরের বানসি পাহাড়পুর ব্লকের বারেথা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যেই শুরু হবে এই খননের প্রক্রিয়া। মন্দির নির্মাণের জন্য সব মিলিয়ে উত্তোলন করা হবে ১ লক্ষ ঘনফুট স্ট্যান্ডস্টোন। আইআইটি-চেন্নাই এবং বহুজাতিক নির্মাণ সংস্থা লারসেন এবং টুব্রো রামমন্দিরের নির্মাণকাজের দায়িত্বে রয়েছে। খননকাজের জন্য অন্যকোনো সংস্থাকে দায়িত্ব দেবে তারাই।
তবে রাজস্থানের বনদপ্তর এখনও সবুজ সংকেত দেয়নি এই প্রকল্পে। খননকার্যের জন্য নির্বাচিত অঞ্চলটিকে চিহ্নিত করে আবেদন জমা দিতে বলেছে অভয়ারণ্যের আধিকারিকেরা। তারপর উক্ত স্থান পর্যবেক্ষণ করেই সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কেবলমাত্র একটি নির্মাণকার্যের জন্য বন্যপ্রাণীদের জীবনে বিঘ্ন ঘটানো সত্যিই কি যুক্তিযুক্ত? সেই সঙ্গে সরকার লঙ্ঘন করছে নিজেরই তৈরি আইন, বিধি-নিষেধ। এই প্রকল্পের জন্য বন্যপ্রাণীদের ক্ষতি তো হবেই। উপরন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পরে নতুন করে মাথা চাড়া দিতে পারে অনৈতিক পাথর উত্তোলনের কাজও। রয়ে যাচ্ছে সেই সম্ভাবনাও। নিজের তৈরি আইনের বেড়াজাল টপকানো ব্যুমেরাং হয়েই ফিরে আসতে পারে সরকারের কাছে, আশঙ্কায় পরিবেশবিদরা...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বন্যপ্রাণ বাঁচাতে শহরের পথে ট্যাবলো