গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম তোলা সহজ নয়। আর তার চেয়েও কঠিন, ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাওয়া কোনো রেকর্ড ভাঙা। তবে মনের জোরের কাছে কিছুই অসম্ভব নয়। ৬৩০ বর্গমিটারের ক্যানভাসে ছবি এঁকে সেই কথাই প্রমাণ করলেন রাজস্থানের (Rajastani Artist) শিল্পী রবি সোনি (Ravi Soni)। সম্প্রতি গিনেস বুক থেকে স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি। এটাই এখনও পর্যন্ত কোনো একক শিল্পীর আঁকা সবচেয়ে বড়ো ছবি। রবি এই ছবিটির নাম রেখেছেন ‘ট্রি অফ লাইফ’ (Tree Of Life)।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজির প্রাক্তনী রবি সোনি। এর আগে তিনি একটি কর্পোরেট সংস্থায় চাকরি করতেন। তবে ২০১৯ সালেই হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দেন। চাকরির চাপে নিজের মতো শিল্পচর্চা করা হয়ে উঠছিল না তাঁর। এরপর নিজের মতো করে ছবি আঁকা শুরু করলেও মাঝে করোনা অতিমারী এসে পরিস্থিতি আবার জটিল করে তোলে। সমস্ত প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যায়। এই প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার লড়াই চালাতে থাকেন রবি। আর তখনই তিনি গাছের কাছে অনুপ্রেরণা খুঁজতে থাকেন। প্রকৃতির নানা প্রতিকূলতাকে সঙ্গে নিয়েই যে জীব স্থির দাঁড়িয়ে থাকে নিজের জায়গায়।
ছবি আঁকার জন্য রবি বেছে নিয়েছিলেন বাওবাব গাছকে। হ্যাঁ, বিভূতিভূষণের ‘চাঁদের পাহাড়’-এ শঙ্কর আফ্রিকার যে গাছকে স্বপ্নে দেখেছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘায়ু এই গাছটির কথা উঠে এসেছে নানা সাহিত্যে। তাকেই এবার ছবির মধ্যে তুলে ধরলেন রবি। আর বিরাট এই গাছের ব্যপ্তি বোঝাতেই ক্যানভাসটিও বড়ো করে নিয়েছেন তিনি। অসংখ্য ছোটো ছোটো পিভিসি বোর্ড জুড়ে জুড়ে তৈরি করেছেন ক্যানভাস। আর তার উপর কালো রং দিয়ে এঁকেছেন ছবি।
অবশ্য এই ছবিটি তিনি এঁকেছেন গিনেস বুকে নাম তোলার জন্যই। শুধু নিজের কাজের স্বীকৃতি হিসাবে নয়, বরং এই রেকর্ডকে তিনি দেখতে চেয়েছেন একটি প্রচারের মাধ্যম হিসাবে। আমাদের জীবনে গাছের ভূমিকাকে নতুন করে মনে করিয়ে দিতেই এই ছবি আঁকা। একদিকে পরিবেশ রক্ষার জন্য গাছের প্রয়োজনীয়তা তো রয়েছেই। অতিমারী পরিস্থিতিতে আমরা সেই প্রয়োজন আরও বেশি করে অনুভব করতে পেরেছি। অন্যদিকে মানসিক বিকাশের জন্যও গাছের নিবিড় ছায়ার বিশেষ প্রয়োজন। এই কথাটাই প্রচার করতে চান রবি।
পিভিসি বোর্ড জুড়ে জুড়ে তৈরি ক্যানভাসের আয়তন দাঁড়ায় ৬২৯.৯৮ বর্গমিটার। কিন্তু এত বড়ো ক্যানভাস কোথায় রেখে আঁকবেন, সেটাও একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত একটি বাসকেটবল কোর্টে ক্যানভাসটি রেখে ছবি আঁকা শুরু করেন। একটি এ-৪ কাগজে আগেই তৈরি ছিল স্কেচ। তবে মূল ছবিটি তার চেয়ে অন্তত ১০ হাজার গুণ বড়ো। স্কেচটি বড়ো ক্যানভাসে তুলতে সময় লাগে একদিন। তারপর সেটা রং করতে লেগে যায় আরও ৫ দিন। এর আগে ইতালির ডুডল শিল্পীর আঁকা ৫৬৮ বর্গমিটারের ছবি বৃহত্তম ছবির স্বীকৃতি পেয়েছিল গিনেস বুক থেকে। রবি সোনির ছবি তার চেয়ে অনেকটাই বড়ো। গিনেস বুকের এই স্বীকৃতি যদি মানুষকে সচেতন করতে পারে, তাহলেই খুশি তিনি।
Powered by Froala Editor