বরং পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য অর্থসংগ্রহ হোক, সাহায্যের প্রস্তাব নাকচ বই-ব্যবসায়ী রাকেশের

বাণিজ্যনগরী মুম্বই। ব্যস্ত শহর, সবসময় লোকজনের ছোটাছুটি লেগেই আছে। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে স্বপ্ন দেখে কয়েকজন; কারোর সত্যি হয়, কেউ বা ওই ভিড়েই হারিয়ে যায় একেবারে। তারই মাঝে বসে থাকেন এক বইওয়ালা। আন্ধেরির কাছেই তাঁর গুমটি। চারিদিকে ছড়ানো অসংখ্য বই। তার মাঝেই একটু ফিকে হয়ে যাওয়া জামা পরে বসে আছেন রাকেশ। এই সেকেন্ড হ্যান্ড বইয়ের দোকানটি তাঁরই। কিন্তু অবাক হওয়ার আরও অনেক সূত্র আছে। এই দোকানের সব বইয়ের দর একই— মাত্র ১০ টাকা! বই ধার নিয়ে যাও, পড়া হয়ে গেলে আবার রাকেশের কাছে নিয়ে এসো। এভাবেই চলছে দোকান… 

একটু ভালোভাবে ওকে দেখলে আরও অনেককিছু চোখে পড়বে। রাকেশের বাম হাতটি নেই। তাও তাঁর কোনো দুঃখ নেই। চারিদিকে নানা ভাষার, নানা রকমের বইয়ের মাঝে বসে থাকতেই তাঁর সবচেয়ে ভালো লাগে। “মানুষ রোজগার করে কীসের জন্য? নিজের পছন্দের জিনিসগুলো যাতে সে করতে পারে। আমার চারিদিকে সেই পছন্দের জিনিসই ছড়িয়ে আছে। এর মধ্যেই আমি থাকি। আর এটাই আনন্দের।” কোনো চাহিদা নেই তাঁর। তবে শুধু নিজেই পড়বে কেন? কেউ যদি এসে সেকেন্ড হ্যান্ড বই পড়তে চায়, তাহলে ধার দেন রাকেশ। শর্ত একটাই, পড়া হয়ে গেলে দিয়ে যেতে হবে। 

এরই মধ্যে শুরু হয়েছে লকডাউন। নানা দুর্যোগ তো লেগেই আছে। রাকেশের কী করে চলছে? সেই চিন্তা করেই তাঁর জন্য ফান্ড জোগাড়ের কাজে নামার পরিকল্পনা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু এক কথায় নাকচ করে দিয়েছিলেন আন্ধেরির রাকেশ। তাঁর সটান জবাব, “আমার কাছে খাবার আছে, বই আছে। মাথার ওপর অল্প হলেও ছাদ আছে। এটাই যথেষ্ট। বরং যে পরিযায়ী শ্রমিকরা দেশের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে, তাঁদের জন্য কিছু করুন। যদি টাকা জোগাড় করতেই হয় তাঁদের জন্য করুন। সেটা অনেক বেশি দরকারি।”

দৈনন্দিন জীবনে আমাদের চাহিদার শেষ নেই। একটা এল তো পরক্ষণেই আরেকটা চাই। কিন্তু ভুলে যাই আশেপাশের সেই মানুষগুলোর কথা যাদের ঠিকমতো ভাতও জোটে না। রাকেশ আমাদের কাছে সেই দিক থেকে আদর্শ। তাঁর দাবিদাওয়া কিছুই নেই। তিনি যেটা চান, সেটার কাছেই আছেন তিনি। বরং ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে যাতে দাঁড়াই, সেই কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন রাকেশ। 

Powered by Froala Editor