শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা ভারতে এলজিবিটি মানুষদের জন্য নানারকম কর্মসূচি যেমন নেওয়া হয়, তেমনই ঘটে নিপীড়নের ঘটনাও। সমাজ যে এখনও বাঁকা চোখে দেখে তাদের! তবে কেবল এখানেই এমন পরিস্থিতি নয়। একই পরিস্থিতি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও। সর্বত্রই লড়াই করছেন ওঁরা; নিজেদের জন্য, সমাজের জন্য। সম্প্রতি কলকাতায় আয়োজিত দক্ষিণ এশিয়ান যুব ও এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সম্মেলন 'রামধনু-কথা'য় যোগ দিয়েছিলেন এঁরা সবাই। কাঁটাতার মুছে, এক অন্যরকম মুক্তির উদযাপন দেখল শহর তিলোত্তমা।
এই নিয়ে তৃতীয় বছরে পড়ল এই সম্মেলন। বাংলাদেশ, মায়ানমার, নেপাল থেকে যেমন মানুষরা এখানে এসেছিলেন; তেমনই যোগ দিয়েছিল ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলিও। দুইদিন ব্যাপী এই সম্মেলনে কলকাতার মার্কিন কনস্যুলেটে উপস্থিত হয়েছিলেন হোচেমিন ইসলাম, সাদাম হানজাবামরা। তৃতীয় বছরে পড়লেও, এই বছরেই সবাই একসঙ্গে এসে সমাবেশ করা সম্ভব হল। এর আগে যতগুলো সম্মেলন হয়েছে, সবটাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। কারণ, সেখানে ছিল নজরদারির ভয়। পাকিস্তানের এলজিবিটি আন্দোলনের মানুষরা এবারেও সশরীরে এসে পৌঁছতে পারেননি। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেই তারা যোগ দেন এখানে। তবে অন্যান্য জায়গা থেকে মানুষরা সশরীরে এসেছিলেন।
'রামধনু কথা'র আহ্বায়ক বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়ের কথায়, "ভারতে সবে ৩৭৭ ধারা রদ করা হয়েছে। অন্যান্য দেশেও আস্তে আস্তে আইনে বদল আসছে। পাকিস্তানে যেমন ২০১৮-তে ট্রান্সজেন্ডার আইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু সমাজের বুকে এখনও নানা সমস্যা ছড়িয়ে আছে। বাংলাদেশে সমকামীরা অবহেলিত। একই চিত্র পাকিস্তানেও। বাংলাদেশের যিনি এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন, তিনি এখানে নিজের মতো সুন্দর করে সেজেছেন। কিন্তু ওখানে এসব কিচ্ছু চলবে না। সমকামী আর নাস্তিক হওয়া অপরাধ!" এই সবকিছুর পেছনে ধর্মীয় মৌলবাদও রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তাদের ফতোয়ার নিদর্শন ভারতেও দেখা গেছে বহুবার, বিশেষ করে ৩৭৭ রদের সময়। এখানকার অন্যান্য রাজ্য থেকেও উঠে এল ট্রান্সজেন্ডারদের অবস্থার মিশ্র চিত্র।
দিনের শেষে, একসঙ্গে নতুন কাজ করার শপথ উঠে এল 'সায়ান'-এর এই মঞ্চে। এই লড়াই যে সবার, এখানে কোনও ভাগ বিভাজন নেই। হাতে হাত ধরে, মিছিলে রামধনু গড়ার কথাই যেন ছড়িয়ে পড়ল শহরে। এখন, কেবল মাঠে নামা বাকি...