২৪৪১১৩৯— নম্বরটা নিশ্চয়ই চিনতে পেরেছেন। ফোনের ওপারে বেলা বোসের সাড়া পেতে বাঙালি একসময় উঠে পড়ে লেগেছিল। ওই নম্বরে সত্যিই কোনও বেলা ছিল কিনা, সেটা গবেষণার বিষয়। কিন্তু বাস্তবের বেলা বোসের খবর কি জানতেন অঞ্জন দত্ত? এই গান তৈরির বহু আগেই তাঁর কর্মকাণ্ড বিস্তৃত ছিল। তিনি, বেলা বসু (মিত্র), ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অনুচ্চারিত নাম।
বিজয়া উপলক্ষ্যে ঘরভাঙা শ্রাবণের গান শোনালেন সাত্যকি ব্যানার্জি
বেলা বসু’র পারিবারিক ইতিহাসও অগ্রাহ্য করার মতো নয়। ১৯২০ সালে ২৪ পরগণার কোদালিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন বেলা। বাবা ছিলেন সুরেশ চন্দ্র বসু, যিনি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু’র সেজদা। তাই ছোট থেকেই বাড়িতে স্বাধীনতা আন্দোলনের একটা পরিবেশ ছিল। পরবর্তীকালে, ১৯৪০ সালে প্রথমবার সক্রিয়ভাবে যোগ দেন সেই আন্দোলনে। নেতাজির অত্যন্ত কাছের ছিলেন বেলা। ’৪০ থেকে তাঁর প্রায় সমস্ত কাজকর্মেই যুক্ত ছিলেন তিনি। তার আগেই আলাপ হয়ে গেছে বিপ্লবী হরিদাস মিত্রের সঙ্গে। সেই আলাপ বিয়েতে পরিণতি পায় ১৯৩৬-এ। আজাদ হিন্দ ফৌজের গুপ্তচর বিভাগের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব সামলেছেন হরিদাস ও বেলা। পরবর্তীকালে হরিদাস মিত্রের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ার পর সেই দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে নিজের কাঁধে তুলে নেন বেলা। বিপ্লবীদের গোপন ডেরায় পাঠানো, তাঁদের পলায়নে সাহায্য করা, সংগঠন চালানো, গোপন সংবাদ আদানপ্রদান— সমস্ত কিছু একা হাতে সামলেছেন তিনি। স্বাধীনতার পরও পূর্ববঙ্গ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য তৈরি করেন তাঁর নিজস্ব সেবাদল ‘ঝাঁসির রানী’। সেই সময় হরিদাস মিত্র বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার পদে আসীন ছিলেন। অবশ্য দীর্ঘজীবী হননি নেতাজির এই ভাইঝি। উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের কাজ করতে করতেই শরীর একদম ভেঙে পড়ে। মাত্র ৩২ বছর বয়সেই মারা যান বেলা বোস মিত্র।
ইতিহাস এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু এরপরও রয়ে গেছে আরও কিছু জিনিস। বেলা বোসের মৃত্যুর পর তাঁর স্মরণে হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইনের একটি রেলস্টেশনের নামকরণ করা হয় ‘বেলানগর’। কোনও মহিলার নামে স্টেশনের নামকরণের নিদর্শন এর আগে এই দেশ দেখেনি। বেলানগর সেই পথেরই পথিকৃৎ।
ছবি ঋণ - indiarailinfo.com
Powered by Froala Editor