চেরনোবিল— জায়গাটির নাম শুনলেই মনে পড়ে যায় আজ থেকে ৩৩ বছর আগে ঘটে যাওয়া একটা দুর্ঘটনার কথা। যে সে ঘটনা নয়, নিউক্লিয়ার দুর্ঘটনা। যার জেরে একটা পুরো অঞ্চলের জীবন বদলে যায়। চারিদিকে ছেয়ে আছে রেডিয়েশন। তার মধ্যেই উঠে এল চমকপ্রদ তথ্য। চেরনোবিলের নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের ভেতরেই নাকি এখন রয়েছে এমন কিছু ফাঙ্গাস, যা ওই তেজস্ক্রিয় বিকিরণকে খেয়ে নেয়! বিজ্ঞানীদের গবেষণা এমনই বিষয়কে তুলে ধরল।
আরও পড়ুন
প্লাস্টিক খেয়ে হজম করে ফেলে শুঁয়োপোকা, পরিবেশ রক্ষায় নয়া আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের
১৯৯১ সালে প্রথম এই রেডিওট্রপিক ফাঙ্গাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায় চেরনোভিলে। কালো, খানিক মণ্ডের মতো দেখতে এই ফাঙ্গাস ওখানকার নিউলিয়ার রিঅ্যাক্টরের দেওয়ালে তৈরি হচ্ছিল। বিজ্ঞানীরা রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছিলেন এমন কাণ্ডে। ওইরকম ভয়ংকর পরিবেশ, যেখানে মাত্র পাঁচ বছর আগে ১৯৮৬ সালে ঘটে গেছে তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণ; সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব কি করে থাকতে পারে! এই পরিমাণ রেডিয়েশনে তো কেউই টিকতে পারে না। পরে গবেষণায় জানা যায় অদ্ভুত তথ্য। মারাত্মক রেডিয়েশনই এই ফাঙ্গাসদের টিকে থাকার ওষুধ। এগুলো খেয়েই বড়ো হয় এরা। ক্ষতিকারক নয়, বরং এটা তাদের কাছে আশীর্বাদ। এই ফাঙ্গাসদের দেহে উপস্থিত মেলানিনের জন্য তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বদলে যায় শক্তিতে। আর তা থেকেই বেড়ে ওঠে এরা।
আরও পড়ুন
নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে কৃত্রিম আলো – বিলুপ্তির পথে জোনাকিরা
মেলানিন নামটার সঙ্গে এর আগেই আমাদের পরিচয় হয়ে গেছে। মানুষের ত্বকেও এই কণাটির অস্তিত্ব আছে। মনে করা হয়, এই পিগমেন্ট যার চামড়ায় যত বেশি থাকবে, অতিবেগুনি রশ্মি থেকে তার সুরক্ষিত থাকার পরিমাণ ততই বাড়বে। রেডিওট্রপিক ফাঙ্গাসের এমন চরিত্র মানুষেরও কোনো কাজে আসে কিনা, তারই চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে, নিইউক্লিয়ার প্ল্যান্টের ইঞ্জিনিয়ার, কর্মী এবং ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এই ফাঙ্গাস ব্যবহার করা হতে পারে। আরও কোনো কাজ করা যায় কিনা, তার জন্য গবেষণা চলছে।