আজ থেকে ১০০ বছরেরও বেশি আগে ইউরোপের কয়েকটি দেশের দ্বন্দ্ব থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। আর সেই ভয়ঙ্কর যুদ্ধের শরিক হয়েছিলেন অসংখ্য ভারতবাসীও। তখনও যে অবিভক্ত ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসনাধীন। অবশ্য বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে ঘিরে স্বদেশির হাওয়াও ঘনিয়ে উঠেছে। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধে ইংল্যান্ডের হয়ে ভারতীয়রা সামিল হলে কৃতজ্ঞতাবশত ইংল্যান্ড ভারতবর্ষকে স্বাধীনতা দিতে পারে বলে মনে করেছিলেন অনেকে। লাখে লাখে ভারতীয় যুবক যুদ্ধে সামিল হয়েছিলেন। না, লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়েও সেদিন স্বাধীনতা মেলেনি। তবে শুধুই প্রতিশ্রুতিভঙ্গ নয়, আরও নানাভাবে ভারতীয়দের বঞ্চনা করেছিল ব্রিটিশ সরকার। বৃহস্পতিবার লন্ডনের হাউস অফ কমন্সে সেইসমস্ত বঞ্চনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করল বর্তমান মন্ত্রিসভা।
সম্প্রতি ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে জমা পড়েছে একটি কমনওয়েলথ রিপোর্ট। বৃহস্পতিবার হাউস অফ কমন্সে সেই রিপোর্ট প্রকাশ করেন প্রতিরক্ষা সচিব বেন ওয়ালেস। রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, কীভাবে বিশ্বযুদ্ধের ভারতীয় সেনারা জাতিগত বিদ্বেষের শিকার হয়েছিলেন। এমনকি এই ১০০ বছর ধরেও কমনওয়েলথ ওয়ারগ্রেভ কমিটি সেই ভুল সংশোধনের কোনো চেষ্টাই করেনি বলে জানিয়েছেন বেন ওয়ালেস। দুই বিশ্বযুদ্ধের শহিদদের দীর্ঘ তালিকা তৈরির কাজ করে চলেছে কমনওয়েলথ ওয়ারগ্রেভ কমিটি। অথচ সেখানে ভারতবর্ষ এবং আফ্রিকার সেনাদের উল্লেখ প্রায় নেই বললেই চলে। সত্যিই কি যুদ্ধে যোগ দেওয়া লক্ষ লক্ষ ভারতবাসী সশরীরে দেশে ফিরতে পেরেছিলেন? ইতিহাস অবশ্য উলটো কথাই বলে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অন্তত ৪৫ হাজার থেকে ৫৪ হাজার ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছিল, যাদের প্রায় কোনো উল্লেখই নেই সরকারি নথিতে। এমনকি যাঁদের নামের উল্লেখ রয়েছে, তাঁদেরও যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করেনি ব্রিটিশ সরকার। এছাড়াও আফ্রিকা এবং আরব অঞ্চলের বহু সেনাও যোগ দিয়েছিলেন ব্রিটিশ বাহিনীতে। কিন্তু তাঁদের বেশিরভাগকেই মনে রাখেনি সরকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও একই ঘটনার পুণরাবৃত্তি দেখা যায়। সব মিলিয়ে অন্তত ৩৫০০০০ শহিদকে একেবারেই ভুলে গিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
২০১৯ সালেই কমনওয়েলথ ওয়ারগ্রেভ কমিটির আন্ডারে একটি একটি পৃথক কমিটি তৈরি করে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। এই কমিটির উদ্দেশ্য ছিল, দুই বিশ্বযুদ্ধের যেসমস্ত শহিদদের কথা সরকার মনে রাখেনি তাদের পরিচয় খুঁজে বের করা। অবশেষে সেই রিপোর্ট প্রস্তুত হয়েছে। আর সেই রিপোর্ট থেকেই উঠে আসছে বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ। রিপোর্টে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ভারতবর্ষ, আফ্রিকা এবং আরবের সেনাদের চামড়ার রং সাদা ছিল না বলেই সম্মান পাননি তাঁরা। এমনকি অসীম সাহসিকতার জন্য যাঁরা সম্মান পেয়েছেন, তাঁদেরও আত্মত্যাগের তুলনায় স্বীকৃতি অত্যন্ত নগন্য। কমিটির সমস্ত অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন প্রতিরক্ষা সচিব বেন ওয়ালেস। তাঁর কথায়, যা ১০০ বছর আগে ভুল ছিল তা আজও ভুল। তবে সেই ভুল এবার সংশোধন করতে হবে। ব্রিটিশ সরকারের হাত ধরেই এবার এক শতাব্দী পর হয়তো সম্মান পাবেন অসংখ্য নির্ভীক ভারতীয় সেনা।
আরও পড়ুন
ইউক্রেন-রাশিয়া দ্বন্দ্বে বিভক্ত পৃথিবী, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিত?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চরমে, ‘শত্রুপক্ষ’ আমেরিকার বুকে মার্চ করলেন হিটলার!