ছড়ের টানে বেজে উঠছে একের পর এক করুণ সুর। রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে যেন একাত্ম হয়ে আছে এই লম্বা, ছড় টানা যন্ত্রটি। হ্যাঁ, এসরাজ। যার সুর আজও সমস্ত সঙ্গীতপ্রেমীকে বসিয়ে রাখে নিরালায়…
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের যত যন্ত্র আছে, তার মধ্যে নবীনতম এই যন্ত্রটি বিশেষ প্রিয় ছিল রবি ঠাকুরের। নানা তল্লাট ঘুরে, নানা নাম নিয়ে, রূপ বদলে এসরাজ আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে। শুরুটা অবশ্য হয়েছিল আফগানিস্তানে। সেখানকার ‘দিলরুবা’ই ভারতের উত্তর অংশে আসার পর রূপ বদলায়। এছাড়াও সারেঙ্গির প্রচলন তো ছিলই। সারেঙ্গি আর সেতার— দুটোর মিলনে তৈরি হয় এসরাজ। এসবই সতেরো শতকের কথা। ধীরে ধীরে বাংলা, বিহার, ওড়িশা-সহ পূর্ব ও উত্তর পূর্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এটি।
আরও পড়ুন
‘আমার বাকি লেখাগুলোয় সুর দিয়ো’, পঙ্কজ মল্লিককে দায়িত্ব দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ
একটা সময় পর্যন্ত সঙ্গতের যন্ত্র হিসেবেই ব্যবহার হত এসরাজের। কিন্তু তার এই সুর কি নিজেই মোহিত করে না আমাদের? রবীন্দ্রনাথ এভাবেই গ্রহণ করেন এই যন্ত্রকে। নিজের গানের সঙ্গে যেন আত্মার যোগ ঘটে যায় এর। সেই সময়ই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় বছর সতেরো’র এক বালকের। নাম, অশেষচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সদ্য তরুণের হাতে এসরাজ যেন অন্য রূপ পায়। মুগ্ধ হলেন রবীন্দ্রনাথ। বিশ্বভারতীতে ডেকে নিলেন অশেষচন্দ্রকে।
সালটা ১৯৩৭। তখন থেকেই যেন যন্ত্রটির রূপ বদলাতে থাকে। আর তারপর সেই ধারা বহন করে নিয়ে যান এসরাজের কিংবদন্তি পণ্ডিত রণধীর রায়। অশেষচন্দ্রের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণের পর এসরাজকে প্রকৃত অর্থেই একক যন্ত্রের স্তরে উন্নীত করেন তিনি। যন্ত্রের বাহ্যিক রূপও বদলে যায় তাঁর হাতে।
আরও পড়ুন
জম্মুর যুবক কুন্দনলালে মুগ্ধ স্বয়ং কবিগুরু, প্রথম অবাঙালি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী তিনিই
আজ এসরাজ বলতে যে যন্ত্রটিকে আমরা দেখি, সেটির রূপ দেন রণধীরই। নিজের স্বর যেন খুঁজে পায় যন্ত্রটি। রবীন্দ্র সঙ্গীতের বিরহ, প্রেম, আনন্দ সমস্ত কিছুই কত স্পষ্ট হয়ে ধরা দিতে থাকে আমাদের কাছে। যেন প্রতিটি শব্দ ফুটে ওঠে সুরে। তিনি যে প্রাণের ঠাকুর, যন্ত্রের আর্তনাদ তিনি ঠিকই শুনতে পেয়েছিলেন…
Powered by Froala Editor