সেপ্টেম্বরের শুরুতেই লন্ডনের নিলাম সংস্থা ‘ক্রিস্টিজ’ জানিয়েছিল, নিলামে উঠতে চলেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) আঁকা একটি নামহীন ছবি। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিল্পরীতির মেলবন্ধনে রবীন্দ্রনাথ যে নতুন ধারার সৃষ্টি করেছিলেন, যার শুরু ও শেষ তাঁর হাত ধরেই, সেই রীতিতেই আঁকা একটি নারী ও একটি পুরুষের প্রতিকৃতি। ক্রিস্টিজের পক্ষ থেকে ছবিটির নাম রাখা হয়েছিল ‘যুগল’। গতকালই ছবিটির নিলাম শেষ হয়েছে। আর সেই ছবি বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লক্ষ টাকায়। এমনটাই জানা গিয়েছে ক্রিস্টিজের তরফ থেকে। তবে ক্রেতার নাম পরিচয় উল্লেখ করেননি তাঁরা।
১৯৩০ সালের কিছু আগে ছবিটি এঁকেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এরপর বিশ্বভ্রমণের সময় বেশ কিছু ছবির সঙ্গে এটিও নিয়ে গিয়েছিলেন। প্যারিসের পিগল আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছিল ছবিটি। সেখানেই ছবিটি কিনেছিলেন জার্মান দম্পতি ফ্রেডরিক ও এডিথ আন্দ্রে। এডিথের কাছ থেকে সেটি আসে তাঁর দাদা ওয়াল্টার রাথেনিউয়ের সংগ্রহে। রাথেনিউ পরিবারের কাছ থেকেই সম্প্রতি ছবিটি সংগ্রহ করেছে ক্রিস্টিজ। পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ক্যানভাসের উপর মিশ্র মাধ্যমে আঁকা ছবিটি প্রায় অবিকৃত অবস্থাতেই আছে বলে জানিয়েছিল সংস্থা।
ক্রিস্টিজের পক্ষ থেকে ছবিটির আনুমানিক মূল্য স্থির করা হয়েছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। কিন্তু বাস্তবে ছবিটি বিক্রি হয়েছে ৬৩৭৫০০ ডলারে। অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার সমান মূল্যে। মাত্র ২২ ইঞ্চি বাই ১৮ ইঞ্চির ক্যানভাসে আঁকা ছবিটি রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য ছবির তুলনায় আয়তনে কিছুটা বড়ো হলেও সার্বিকভাবে দেখতে গেলে যথেষ্ট ছোটো আয়তনের ছবি। এমন আয়তনের ছবি এত বেশি মূল্যে বিক্রি হওয়ার ঘটনা সত্যিই বিরল। এই ঘটনাই আবারও প্রমাণ করল, সারা বিশ্বের কাছে রবীন্দ্রনাথের প্রতিটা সৃষ্টির মূল্যই কতটা বেশি।
রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন তাঁর লিখিত সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন প্রাচ্যের জন্য, আর পাশ্চাত্যের জন্য রেখে গিয়েছেন তাঁর ছবিগুলি। তবে স্বাধীন ভারত সরকার ৯ জন শিল্পীর ছবিকে জাতীয় সম্পদ হিসাবে ঘোষণা করেছেন, যাঁদের ছবি দেশের বাইরে বিক্রি করা যাবে না। এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ একজন। ফলে তাঁর জীবদ্দশাতেই যে ছবিগুলি বিক্রি হয়ে গিয়েছিল, সেটুকুই আজ পাশ্চাত্যের সম্পদ। আর তাঁর মৃত্যুর ৮০ বছর পরেও পাশ্চাত্যের কাছে সেই মূল্য এতটুকু হ্রাস পায়নি।
Powered by Froala Editor