‘নিবিড় অমা-তিমির হতে বাহির হল’ বা ‘আজি শ্রাবণঘনগহন মোহে গোপন তব চরণ ফেলে’; কথাগুলো মনে এলেই আজও ভেসে আসে একটাই কণ্ঠ। যে কণ্ঠ ৮০-র দশক তো বটেই, তারপর সবসময় বাঙালির একাকিত্বের সঙ্গী হয়ে থেকে গিয়েছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের আবেদনকে আবেগে পরিপূর্ণ করে পৌঁছে দিয়েছে ঘরে ঘরে। আজ সেই গলার অসংখ্য রেকর্ডিং শুধু পড়ে আছে। মানুষটি নেই। বাংলা সঙ্গীত জগতে ঘটে গেল আরও এক নক্ষত্র পতন। সুরলোকে পাড়ি দিলেন পূর্বা দাম।
১৯ সেপ্টেম্বর, শনিবার, ঢাকুরিয়ার বাসগৃহে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন পূর্বা দাম। জানা গিয়েছে, বয়সের কারণে দীর্ঘদিন অসুস্থতায় ভুগছিলেন শিল্পী। চিকিৎসকরাও সমস্ত আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। অবশেষে এল সেই দুঃসংবাদ। তাঁর আগের প্রজন্মের স্বনামধন্য শিল্পী সুচিত্রা মিত্রের হাত ধরে পা রেখেছিলেন সঙ্গীতের জগতে। সেই শিক্ষাই সারা জীবন সঙ্গী হয়ে ছিল। আর কাকতালীয়ভাবে সুচিত্রা মিত্রের জন্মদিনেই শেষ নিঃশ্বাস নিলেন পূর্বা দাম।
পূর্বা দাম মানে বাঙালির কাছে আস্ত একটা প্রজন্ম। ১৯৩৫ সালে কলকাতায় তাঁর জন্মের সময় থেকেই ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়েন রবীন্দ্রনাথ। কবির সঙ্গে সাক্ষাতের কোনো সুযোগ তাঁর ঘটেনি। শুধু থেকে গিয়েছিল রবীন্দ্রনাথের গান। সেই গান ছোটো থেকেই এক অজ্ঞাত জগতে টেনে নিয়ে যেত পূর্বাকে। আর এই গানের সূত্রেই যোগাযোগ হল সুচিত্রা মিত্রের সঙ্গে। তাঁর গানের স্কুল ‘রবিতীর্থ’-এর অন্যতম সদস্যা ছিলেন পূর্বা। সুচিত্রা মিত্রও অত্যন্ত স্নেহ করতেন তাঁর এই ছাত্রীকে। অনেকে পূর্বা দামকে সুচিত্রা মিত্রের ভাবশিষ্যও বলে থাকেন।
রবীন্দ্র সঙ্গীতের স্বর্ণযুগ যখন ক্রমশ বিদায়মান, তখনই পেশাদার মঞ্চে আত্মপ্রকাশ পূর্বা দামের। ১৯৮০-র দশকের শুরু থেকেই তিনি বাঙালির মন জয় করতে থাকেন। এই দশকের শেষদিকে তাঁকেই সমসাময়িক কালের শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী হিসাবে চিনে নিয়েছিলেন শ্রোতারা। শ্রোতাদের ভালোবাসার পাশাপাশি পেয়েছেন সম্মানও। ২০১৩ সালে তাঁকে সঙ্গীত সম্মান প্রদান করে পরশ্চিমবঙ্গ সরকার।
আরও পড়ুন
রামকৃষ্ণকে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শোনালেন তরুণ নরেন্দ্রনাথ, গুরুর মৃত্যুশোকেও সঙ্গী সেই গানই
সারা জীবন সুচিত্রা মিত্রের শিক্ষাকেই পাথেয় করে থেকেছেন পূর্বা দাম। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গানের সুরে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শিক্ষিকাকে। আর সুচিত্রা মিত্রের জন্মদিনেই তাঁর ছাত্রীর মৃত্যু সত্যিই এক অদ্ভুত ঘটনা। তবে পূর্বা দামের অবর্তমানেও থেকে যাবে তাঁর ‘সীমার মাঝে অসীম তুমি’, ‘যদি তোমার দেখা না পাই প্রভু’, ‘সন্ধ্যা হল গো ও মা’ প্রভৃতি অ্যালবাম। তাঁর মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। আর তাঁর অসংখ্য শ্রোতা আঁকড়ে ধরেছেন তাঁর গানকেই। রবীন্দ্রনাথের কথায় আর পূর্বা দামের কণ্ঠে যে গান বিদায়ের সুরকে ঘনিয়ে তোলে।
আরও পড়ুন
৫০ বছর ধরে চিন থেকে সম্প্রচারিত হচ্ছে বাংলা সংবাদ, বেজে ওঠে রবীন্দ্রসঙ্গীতও!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ফুলশয্যার রাতে, স্ত্রী’র কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে চাইলেন তরুণ জীবনানন্দ