প্রকৃতির কাছে ফেরার তাগিদ, চাকরি ছেড়ে নার্সারির ব্যবসা ইঞ্জিনিয়ারের

ছোটোবেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা জল নিয়ে খেলা করতেন তিনি। তার জন্য মায়ের থেকে শাস্তিও পেতে হত তাঁকে। একটু বেয়াড়া রকমের শাস্তিই বটে। বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে না গিয়ে বাগানের প্রতিটা গাছে জল দিতে হত তাঁকে। তা নিয়ে বেশ বিরক্তই হতেন তিনি।

বর্তমানে ২৮ বছর বয়সি ম্যাঙ্গালুরুর (Mangaluru) বাসিন্দা জ্ঞান শেট্টির (Gyan Shetty) দৈনন্দিনের রুটিন এটাই। সকাল হোক কি সন্ধে— তাঁর সারাদিনটাই কেটে যায় বাগান পরিচর্যায়। কখনও জল দিচ্ছেন গাছে, কখনও আবার ফুল সংগ্রহ করছেন গাছের চারা তৈরির জন্য। আদতে ইঞ্জিনিয়ার হলেও শেষ পর্যন্ত ‘গার্ডেনিং’-ই পেশা হয়ে উঠেছে তাঁর। উপার্জনের মাধ্যম হয়ে উঠেছে নার্সারি। 

প্রযুক্তিতে স্নাতকোত্তর করার পর ২০১৬ সালে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে যোগদান করেন জ্ঞান। তিন বছরের বেশি সময় সেখানে কাজ করেছেন তিনি। তারপরই দৈনন্দিন জীবনে থাবা বসায় মহামারী। বাড়ি ফিরে আসতে হয় তাঁকে। গৃহবন্দি দশা, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর এই দুনিয়ায় প্রায় দমবন্ধ হয়ে এসেছিল জ্ঞানের। তাই একঘেঁয়েমি কাটাতে ফের প্রকৃতির কাছেই ফিরেছিলেন তিনি। নতুন গাছ লাগানো, গাছের চারা তৈরি করা এবং বাগান পরিচর্যার মধ্যে দিয়েই অবসর যাপন করতেন তিনি। খেয়ালের বশে সে-সব ছবি সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলেও প্রকাশ করতেন কখনও কখনও। 

শুরুটা হয় সেখান থেকেই। তাঁর পোস্ট করা ছবি ও ভিডিও দেখে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির ফুল বা ফলের চারার অনুসন্ধান শুরু করেন স্থানীয়রা। এমনকি মহীশূর, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ থেকেও গাছের চারা কিনতে চেয়ে তাঁকে বার্তা পাঠান বহু মানুষ। না, তাঁদের ফেরাননি তরুণ প্রযুক্তিবিদ। বরং, নার্সারির এই ব্যবসাই হয়ে ওঠে তাঁর বাড়তি উপার্জনের পথ। বাগান পরিচর্যার ক্ষেত্রে মা এবং বাড়ির মালীর সাহায্য পেলেও প্রথমদিকে অফিস এবং নার্সারি— দু’দিকই সামলাতে হত তাঁকে। পরবর্তীতে চারার চাহিদা বাড়তে থাকায় চাকরি ছেড়ে সম্পূর্ণভাবে বাগানেই মনোনিবেশ করেন জ্ঞান। 

না, শুধু অর্থ উপার্জনের জন্যই না। প্রকৃতির কাছে ফেরার তাগিদই তাঁকে এই পথে নিয়ে এসেছে বলেই মনে করেন ম্যাঙ্গালুরুর প্রাক্তন প্রযুক্তিবিদ। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে খুলেছিল তাঁর নার্সারি ‘নাম্মা গার্ডেন’। বর্তমানে সেখানে উপলব্ধ শতাধিক প্রজাতির ফুল, অর্কিড, পাঁচটি প্রজাতির আম, চিকু, কাস্টার্ড আপেল, রাম্বুটান, পেয়ারা, কাঁঠাল, তুঁত, লেবু, ডালিমের চারা। কোনো চারার দাম ৩০ টাকা, কোনোটির আবার ৮০০০। অনলাইনে গাছ বিক্রির পাশাপাশি বর্তমানে এই নার্সারিতেও ছোট্ট একটি আউটলেট খুলেছেন তিনি। খুলেছেন একটি প্রদর্শনীশালাও। এই নার্সারি তো বটেই, সঙ্গে তাঁর বাড়ির বারান্দা, বেডরুম, বসার ঘর-জুড়ে সবমিলিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে প্রায় ৩ হাজার গাছ। 

তবে শুধু গাছের ব্যবসাই নয়, মানুষকে প্রকৃতিমুখো করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানাধরনের প্রচারও চালিয়ে যাচ্ছেন তরুণ প্রযুক্তিবিদ। সচেতনতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন নিজের সাবলীল বাচনভঙ্গির মাধ্যমে। অভিমত, ভবিষ্যতে সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে গেলে, গাছ লাগানো ছাড়া উপায় নেই কোনো…

Powered by Froala Editor