পরনে কালো টিশার্ট। হাঁটু পর্যন্ত গোটানো পাজামা। লাঙল করা মাটিতে সযত্নে চারা বসাচ্ছেন দীর্ঘকায় এক ব্যক্তি। নিয়মিত শরীরচর্চা কিংবা খেলাধুলোর অভ্যাস রয়েছে তাঁর, তা এক ঝলক দেখলেই বোঝা যাবে। না, আমার-আপনার খুব একটা পরিচিত না ঠেকারই কথা। কিন্তু মার্কিন মুলুকে ক্রীড়াজগতের এক জনপ্রিয় মুখ তিনি। বা, বলা ভালো তিনি মার্কিন ফুটবল লিগ এনএফএল-এর (NFL) একসময়ের সবথেকে দামি তারকা। জেসন ব্রাউন (Jason Brown)। কিন্তু তারপরেও এহেন জীবনযাপনের অর্থ কী?
সেই উত্তর খোঁজার আগে পিছিয়ে যাওয়া যাক দু’দশক। স্কুলজীবনে অ্যাথলেটিক্সের হাত ধরেই ক্রীড়াজগতে পা রাখা জেসনের। ডিসকাস, শট পুট-সহ একাধিক ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড খেলায় খুব অল্পদিনের মধ্যেই পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছিলেন তরুণ জেসন। রয়েছে চারটি স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপের পদকও। কিন্তু অ্যাথলেটিক্সে সেভাবে উপার্জনের জায়গা কই? দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে তাই পরবর্তীকালে ফুটবলকেই বেছে নেন জেসন ব্রাউন।
২০০৪ সালে নর্থ ক্যারোলিনার হয়ে আমেরিকান ফুটবলে আত্মপ্রকাশ ব্রাউনের। রাজ্যদলে সুযোগ প্রথম বছরেই প্রতিটি ম্যাচেই অন্যতম ভরসাযোগ্য খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। গোটা টুর্নামেন্টে ধারাবাহিক ফর্ম বজায় রাখার জন্য সুযোগ আসে বাল্টিমোর রেভেন্সের হয়ে এনএফএল লিগে খেলার। বছর তিনেক পর রেকর্ড পরিমাণ ট্রান্সফার ফি দিয়ে তাঁকে দলে টানে আরেক এনএফএল জায়েন্ট সেন্ট লুইস র্যা মস। ২০০৯ সাল সেটা। ৩.৭৫ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিময়ে লুইসের চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন জেসন। তৎকালীন সময়ে সেটাই ছিল এনএফএল লিগে খেলা কোনো খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ বেতন।
তবে, পাঁচ বছর সেন্ট লুইসের জার্সিতে আর খেলা হয়নি তাঁর। ২০১২ সালে ক্লাবের চুক্তি ভেঙে মাত্র ২৯ বছর বয়সে অবসর ঘোষণা করেন জেসন। ইতি টানের খেলোয়াড় জীবনে। না, চোটের কারণে কিংবা ধারবাহিকতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য নয়। বরং, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আসলে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবলে কোটি কোটি টাকার ছড়াছড়িই ভাবিয়ে তুলেছিল তাঁকে। পাশাপাশি ভাবিয়ে তুলেছিল শৈশবের অর্থাভাবের দিনগুলো। সত্যিই তো, আধুনিকতার মোড়ক বসেছে পৃথিবীর গায়ে ঠিকই, কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়েও কি অনাহার মুছে গেছে সমাজের বুক থেকে? নাকি বিদায় নিয়েছে দারিদ্র্য? তাঁদের পাশে কি কোনোভাবেই দাঁড়ানো যায় না?
আরও পড়ুন
খরার দোসর খাদ্যাভাব, মৃত উটেরাও, মর্মান্তিক পরিস্থিতি কেনিয়ায়
এসব প্রশ্নই যেন সেসময় তাড়া করে বেড়াত তাঁকে। আর সেখান থেকেই ইতি টানা ফুটবল কেরিয়ারে। সিংহাসন ছেড়ে বেছে নেওয়া কৃষকের জীবন। সেই কৃষিকাজও তাঁর শেখা ইউটিউব দেখেই। তারপর যাকে বলে বনবাস-যাপন। বর্তমানে ক্যারোলিনায় প্রায় ১০০০ একর জমিতে খামার চালান জেসন। উৎপাদন করেন মিষ্টি আলু এবং বিভিন্ন ধরনের সবজি। তার সবটাই প্রায় বিনামূল্যে তুলে দেন প্যান্ট্রিতে। দরিদ্র মানুষদের জন্য। আর উপার্জন হিসাবে যেটুকু কাঁচা টাকা হাতে থাকে, সেটাও খচর হয়ে যায় কর্মীদের বেতন দিতেই। কিন্তু মানুষের অসহায়তার পাশে দাঁড়ানোর মধ্যে যে আনন্দ আছে, তা আর অন্য কোথাও কই? সেই আনন্দটুকুই যেন পাথেয় জেসনের। সেই পাথেয় খুঁজতে গিয়ে খেলার জগৎ থেকে বেরিয়ে তিনি যে কখন ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হয়ে উঠেছেন, তা নিজেও কি জানেন তিনি?
আরও পড়ুন
শীত পড়তেই চরম খাদ্য সংকটে আফগানিস্তান, বাড়ছে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মহাকাশ-ফেরত ধানের চাষ চিনে, ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট মেটাবে এই ‘স্বর্গীয় চাল’