৬৭ বছর বয়সে, পর্তুগিজদের দেশছাড়া করেছিলেন আফ্রিকার ‘রানি লক্ষ্মীবাঈ’

একসময় পৃথিবীর বেশ কিছু দেশেই ছিল ঔপনিবেশিক শাসন। ভারত তো বটেই, আফ্রিকা ও এশিয়ার অনেক জায়গাতেই আধিপত্য ছিল এদের। একসময় এই শিকল থেকে বেরনোর জন্য গর্জে ওঠে মানুষ। পুরুষরা তো বটেই, মহিলারাও সামিল হন আন্দোলনে। সুদূর আফ্রিকাতেও তার অন্যথা হয়নি। ‘কালো চামড়ার দেশে’ দাঁড়িয়ে সেই সময় লড়েছিলেন এক নারী। রানি এনজিঙ্গার কাহিনি সেই সাহসের কাহিনি…

সতেরো শতকে আফ্রিকায় প্রবলভাবে চালু ছিল দাসপ্রথা। ইউরোপীয় মানুষরা এসে এখান থেকে শয়ে শয়ে মানুষকে নিয়ে যেত তাদের দেশে। সঙ্গে চলত নিপীড়ন, অত্যাচার। এই ছবিটার শুরু ১৬ শতকে। ১৫৬০ সালে পর্তুগিজ এবং এখানকার মিশনারিদের জাহাজ এসে ভেড়ে আফ্রিকায়। কোয়ানজা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এনডোঙ্গো রাজবংশের রাজত্বে ঢুকেও পড়ে। রাজা কিলাউনজি এনডাম্বি’র এই বিদেশিদের যে সন্দেহ হয়নি, তা নয়। কিন্তু তাও অনুমতি দিয়েছিলেন। সেটা যে কত বড়ো ভুল ছিল, তার প্রমাণ মেলে পরে। বড়ো সেনাবাহিনী নিয়ে আফ্রিকায় ফিরে আসে পর্তুগিজরা। দখল করে সেই জায়গা। সেখানকার সমস্ত সম্পদ লুঠ করে।

প্রথমে এনডাম্বি, পরে তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে এমবান্ডিও পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে লাগাতার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। সেই সময় অলক্ষে আরও একজনও ছিলেন। রানি এনজিঙ্গা। সম্পর্কে রাজা এনডাম্বির মেয়ে ছিলেন তিনি। পরাক্রমে রাজার মতোই ছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নিতেন রীতিমতো। তাঁর ব্যক্তিত্বে প্রথমে ভীত ছিলেন এমবান্ডি। এমনকি, রাজা হওয়ার পর তাঁর ছেলেকেও হত্যা করেন। কিন্তু পরে, যখন এক এক করে যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয় ঘটছে তাঁর; তিনি ফিরে গেলেন বোনের কাছে।

এই সময় থেকেই শুরু এনজিঙ্গার রাজত্বের। তাঁর প্রবল বিক্রমের কাছে একে একে পিছু হটতে থাকে বিদেশি শক্তি। ভাইয়ের পর ১৬২৩ সালে তিনি নিজেই সিংহাসনে বসেন। তখন তিনি ৪২ বছরের। তাও বীরত্ব কমেনি একফোঁটাও, বরং বেড়েছে কয়েক গুণ। গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ করতে লাগলেন পর্তুগিজদের। পাল্টা আঘাত হানল তারাও। রানির নিজের বোনকে হত্যা করল তারা। তাও দমে যাননি তিনি। বিশাল সেনা নিয়ে লুয়ান্ডার বন্দর দখল করেন। ৬৭ বছর বয়সে ইলাম্বার যুদ্ধে পর্তুগিজদের পরাস্ত করেন। আরও কয়েক বছর প্রতিরোধ করার পর শেষে হার মানতে বাধ্য হয় তারা। এনডোঙ্গো প্রদেশ ও মাতাম্বা অঞ্চলকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করা হয়। নিজের রাজত্ব নিজের সৈন্যবল, শক্তি দিয়েই অধিকার করলেন রানি এনজিঙ্গা।

তাঁর মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আবারও বদলে যায়। কিন্তু যতদিন বেঁচে ছিলেন, নিজের প্রজাদের, নিজের মানুষদের অধিকারের জন্য লড়ে গিয়েছিলেন রানি এনজিঙ্গা। তাঁকে আজও আফ্রিকার সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব বলে মানা হয়, যিনি পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। তাঁর লড়াই শুধু কালো মানুষদের অধিকারের লড়াই নয়; নিজের রাজ্যকে বাঁচানোর লড়াই। সেই সঙ্গে নারীশক্তিরও প্রতীক।