রাজকুমারীর সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী সবসময় সতর্ক। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল এমন এক সময়, যখন প্রত্যেকের মধ্যেই আতঙ্ক গ্রাস করেছিল। ইংল্যান্ডের রাজকুমারী এলিজাবেথের মনের মধ্যেও বাসা বেঁধেছিল ভয়। আর তাই তিনি ঠিক করলেন, নিজেই আগ্নেয়াস্ত্র চালানো শিখবেন। বাকিংহাম প্যালেসের বাগানের কোণে যেখানে ইঁদুরের আস্তানা, সেখানেই মৃদু বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বের করে আনা হত তাদের। আর তারপর তাদের লক্ষ করেই পিস্তলের টিপ অভ্যাস করতেন রাজকুমারী এলিজাবেথ।
কথায় বলে, যখন নগর পোড়ে তখন দেবালয় অক্ষত থাকে না। তেমনই যুদ্ধের সময় রাজ পরিবারকেও প্রস্তুতি নিতে হয় আসন্ন সঙ্কটের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তেমনই পরিবর্তন নেমে এসেছিল ইংল্যান্ডের রাজপরিবারেও। ২০১৫ সালে, মৃত্যুর কিছুদিন আগে তেমনই সব স্মৃতি প্রকাশ্যে এনেছেন পরিবারের সদস্য মিসেস মার্গারেট রোডেস। সেখানে রানি এলিজাবেথের পিস্তল চালানো শেখার কথাও যেমন তুলে ধরেছেন, তেমনই তুলে ধরেছেন সেইসময় পরিবারের শিশুদের বেড়ে ওঠার কাহিনিও।
নাৎসি বাহিনী তখন সমস্ত ইউরোপের ত্রাস। ইংল্যান্ড বা ফ্রান্স, কেউই তখনও জার্মানিকে প্রতিরোধ করতে পারছে না। আর রেড আর্মির আগামী লক্ষ্য যে বাকিংহাম প্যালেস নয়, সে-কথা কি জোর দিয়ে বলা যায়? ইংল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বাহিনী তাই রাজপরিবারকে জানায়, অবিলম্বে তাঁদের প্রাসাদ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হবে। কিন্তু বাকিংহাম ছেড়ে যেতে রাজি হলেন না রানি এলিজাবেথ। বরং ঠিক করলেন, আক্রমণ যদি হয় তাহলে নিজের পরিবারকে রক্ষা করার দায়িত্ব নেবেন তিনি নিজেই। শুরু হল পিস্তল চালানোর অনুশীলন। তবে শেষ পর্যন্ত বাকিংহাম প্যালেসের উপর জার্মান বাহিনী কোনো আক্রমণ চালায়নি।
তবে রাজপরিবারের জীবন যে একেবারে নিরুপদ্রবে কেটেছে, এমনটা নয়। শৈশবের সেইসব স্মৃতি মৃত্যুর দিন পর্যন্ত মনে রেখেছিলেন রোডেস। তাঁর স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, ইংল্যান্ডের সার্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব পড়েছিল তাঁদের জীবনেও। ইংল্যান্ডের মসনদে তখন রাজা ষষ্ঠ জর্জ। অবশ্য রাজকোষ শূন্য হয়ে যায়নি। কিন্তু সঙ্কটের সময় প্রজারা যেমন কষ্টে রয়েছেন, সেই কষ্ট ভাগ করে নিতে চেয়েছিলেন রাজা-রানিও। রাজপরিবারের শিশুদের খাবার জুটেছে রেশন থেকেই। আর পোশাকের আড়ম্বরও ছিল না কিছুই। এমনকি সমস্ত ইংল্যান্ডের মানুষ কীভাবে আতঙ্কে দিন গুনছেন, সেই অভিজ্ঞতার জন্য নানা সময় গ্রামেগঞ্জে পাঠিয়ে দেওয়া হত শিশুদের। উইনডশোর ক্যাসেলের তেমনই এক অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন মার্গারেট রোডেস।
আরও পড়ুন
ডাক পেয়েছেন রানি এলিজাবেথের থেকেও, বাঙালিই মনে রাখেনি বিজ্ঞানী মাধবচন্দ্র নাথ-কে
ক্যাসেলের বাগানে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ রোডেস দেখলেন আকাশে ঘুরপাক খাচ্ছে একটি যুদ্ধবিমান। বেশ নিচ দিয়েই উড়ছিল বিমানটি। রোডেস স্পষ্ট দেখেছিলেন, তার গায়ে আঁকা স্বস্তিকা চিহ্ন। এই চিহ্ন দেখলেই বোঝা যায় বিমানটি নাৎসি বাহিনীর। রোডেস তখনই হাতের .২২ রাইফেল থেকে গুলি ছুঁড়তে শুরু করেন। যদিও সেই গুলি বিমানের গায়ে লাগেনি। তবে শত্রুপক্ষকে লক্ষ করে গুলি চালানোর আনন্দেই বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন ছোট্ট রোডেস। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী যুদ্ধের সঙ্গে এভাবেই জড়িয়ে পড়েছিল সমস্ত মানুষ। আজ তার খুব সামান্য স্মৃতিই জীবিত আছে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে রাখি পাঠালেন রাজপুত রানি কর্ণাবতী, সাড়া দিলেন সম্রাটও