একজনের সাধ্য নয়, এই বন্দুক চালাতে প্রয়োজন দুজন মানুষ!

ভারত হোক বা অন্য কোনো দেশ, অ্যাকশন সিনেমা মানেই পকেট থেকে বেরিয়ে আসবে চকচকে কালো বন্দুকটি। আকারে বড়ো হলে বড়জোর গাড়ি থেকে বের করে আনা হবে আগ্নেয়াস্ত্র। তারপর কার্তুজ ভরেই শুরু হবে লড়াই। একজন মানুষই অবলীলায় ধরে আছে বন্দুকটি। সবসময় এমনটাই দেখে এসেছি আমরা। আচ্ছা, যদি একজনের বদলে দুজন মিলে বন্দুকটি ধরতে হয়? উল্টোদিকের লোকেরা তো হাসবে! একটা ‘সামান্য’ বন্দুক একজনে ধরতে পারছে না, সে আবার শত্রু মারবে! কিন্তু ইতিহাস ঘাঁটলে এমনই তথ্য উঠে আসবে আমাদের সামনে। চেহারায় কামান; কিন্তু স্বভাব তার বন্দুকের মতোই। আর তার জন্যই কিনা দরকার দুজন মানুষের!

বন্দুকটির নাম পান্ট গান। শটগানই বলা চলে একে। অন্যান্য বন্দুকের থেকে এই বিশেষ বন্দুকটি একটু বড়োই হয় আকারে। কিন্তু এই পান্ট গান সেই সবকিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বিশাল বড়ো গোদা বন্দুক; দূর থেকে দেখলে মনে হবে কামান হেঁটে যাচ্ছে। এমন আকারই বাকিদের থেকে আলাদা করেছিল একে। ইতিহাসে জায়গা করে নেয় এই বিশেষ পান্ট গান। 

উনবিংশ থেকে বিংশ শতকের শুরুর সময় পর্যন্ত এই বন্দুকের ব্যাপক ব্যবহার ছিল। তাই বলে যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, শুধু পাখি শিকারের কাজেই একে ব্যবহার করা হত। তার অন্যতম কারণ ছিল এর আকার। পান্ট গান এতটাই বড়ো এবং ভারী ছিল যে দুজন মানুষ মিলে বন্দুকটি চালাত। একজনের পিঠে বন্দুকের নল রেখে, অন্যজন ট্রিগার টিপত। এই পুরো ব্যাপারটাই ছিল ভীষণ মুশকিলের। এছাড়াও, নৌকোর মধ্যেও বন্দুকটিকে ভালোভাবে বসিয়ে রেখে চালানো যেত। সেক্ষেত্রে গুলি বেরনোর পর ব্যাকফায়ারে নৌকোটিও মাঝেমধ্যে উল্টে যেত… 

এত বড়ো বন্দুককে নিয়ে নিশ্চয়ই যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়া যায় না! কিন্তু শিকারের দিক থেকে পান্ট গান ছিল যথেষ্ট উপযোগী। মূলত ওয়াটারফাউল পাখি শিকারের জন্য এটি ব্যবহৃত হত। এর একটা শটে ৫০টি পাখি একসঙ্গে মারা যেত! তাহলেই বুঝুন! বন্দুকদের রজনীকান্ত বললে কম বলা হয় না। শিকারিরাও খুশি। কিন্তু একটু একটু করে শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হল। সেইসঙ্গে এত বড়ো বন্দুক নিয়ে যাওয়া আসা করাটাও অত্যন্ত সমস্যার। তাই বিংশ শতাব্দীতেই ইতি হল পান্ট গানের। কিন্তু ‘অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখে চলা’ প্রবাদটিও ততদিনে সত্যি করে দিয়ে গেছে এই বন্দুকটি… 

Powered by Froala Editor