এক বছরে ৩ টন প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ, অনন্য নজির স্কুল-পড়ুয়াদের

দেড় দশক আগের কথা। ২০০৮ সালে পুনের (Pune) মুলা এবং রামনদীতে রোয়িং করার সময়ই আশ্চর্য এক দৃশ্য চোখে পড়েছিল পুনের বেসরকারি সংস্থা সুজলন এনার্জি লিমিটেডের কর্মী বিনোদ বোধনকরের। লক্ষ করেছিলেন, নদীর দু-প্রান্তেই থরে থরে জমে রয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্য। দিন কয়েক বাদে ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবীদের জড়ো করে, সেই আবর্জনা অপসারণের জন্য মাঠে নেমেছিলেন তিনি। তবে এভাবে যে বদল আনা সম্ভব নয়, বুঝেছিলেন সেটাও। 

সমাজে কোনো স্থায়ী পরিবর্তন আনতে গেলে, প্রচার শুরু করতে হয় প্রাথমিক স্তর থেকেই— এমনটাই বিশ্বাস বিনোদের। বিশ্বাস, প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে কিশোর-কিশোরীদের পরিবেশ দূষণ সম্পর্ক সচেতন করার কাজ অনেক সহজ এবং ফলপ্রসূ। তাই প্লাস্টিক দূষণে রেশ টানতে স্কুলের কচি-কাচাদের নিয়েই তিনি গড়ে তুলেছেন তাঁর ‘সেনাবাহিনী’। যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন প্লাস্টিক বর্জ্যের বিরুদ্ধে। 

‘সাগরমিতা’-খ্যাত (Sagarmita) এই প্রকল্পের পথচলা শুরু হয় ২০১১ সালে। প্রাথমিকভাবে পুনের স্থানীয় একটি স্কুলের দেড় শতাধিক ছাত্রছাত্রীদের নিয়েই কাজ শুরু করেন বিনোদ। উদ্যোগ যথেষ্ট সফল হলেও, তাদের নিরাপত্তার কথা ভাবিয়ে তোলে তাঁকে। সেই অভিযানের সময় কুকুরের কামড়ের শিকার হয় এক শিশু, কেউ আবার হাত-পা কেটেছিল ভাঙা কাচের টুকরোয়। 

এই ঘটনার পরই প্রকল্পের খোলনলচে বদলে ফেলেন বিনোদ। পরিকল্পনা করেন, বাড়ির গণ্ডি না পেরিয়েই লড়াই চালিয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা। বাড়িতে ফেলে দেওয়া যে-কোনো ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য পৃথক করে রেখে তা স্কুলে এসে জমা দেবে তারা। সম্মিলিতভাবে কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী এই ‘শৃঙ্খল বিক্রিয়া’-তে অংশ নিলে প্লাস্টিক বর্জ্যের উৎপাদন এবং জলজ পরিবেশে তার মেশার সম্ভাবনা নিয়ন্ত্রিত হবে দুটোই। 

হ্যাঁ, সফল হয়েছে বিনোদের এই প্রকল্প। বর্তমানে কেবলমাত্র পুনেরই ১ লক্ষ ৭২ হাজার ‘সাগরমিতা’-যোদ্ধা লড়াই করছে তাঁর হয়ে। শুধু প্লাস্টিক আবর্জনা সংগ্রহই নয়, নিজেদের ছোট্ট পরিসরে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার দায়িত্বও নিয়েছে তারা। পরিসংখ্যান বলছে, গড়ে প্রতি বছরে ৩ টনের বেশি প্লাস্টিক সংগ্রহ করেছে এই কিশোর-কিশোরীরাই। এই প্লাস্টিক প্রতি স্কুল থেকে সংগ্রহ করে তা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে পৌঁছে দেয় বিনোদবাবুর সংস্থা। একদিকে যেমন তা পুনর্ব্যবহৃত হয়, তেমনই এ প্লাস্টিক বিক্রির টাকা দিয়েই গড়ে তোলা হয় একাধিক সামাজিক তহবিল।

২০২০ সালে মহামারী শুরু হওয়ার পর সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় এই প্রকল্প। তবে লকডাউন শিথিল হওয়ার পর ফের নতুন উদ্যোগে মাঠে নেমেছে তরুণ-যোদ্ধারা। সম্প্রতি এই উদ্যোগকে বিশেষ স্বীকৃতি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহাসাগর দূষণ গবেষণা সংস্থা ‘৫ গিয়ারস ইনস্টিটিউট’, ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দিয়েছে ‘ওসান হিরো’-র শংসাপত্র। সবমিলিয়ে কিশোর-কিশোরীদের হাত ধরেই যেন ভারতজুড়ে গড়ে উঠছে এক বৃহত্তর পরিবেশ আন্দোলন… 

Powered by Froala Editor