কোনো প্রসূতি কন্যাসন্তানের (Girl Child) জন্ম দিয়েছেন, এই খবর শোনা গেলেই যেন উৎসবের মেজাজ ছড়িয়ে পড়ে পুনের মেডিকেয়ার হসপিটালে। হাসি ফুটে ওঠে সন্তানের বাবা-মায়ের মুখে। হাসপাতালের ভিতরে ও বাইরে শুরু হয় মিষ্টি বিতরণ। আজও যেখানে ভারতে বহু বাবা-মা চান না তাঁদের সংসারে কন্যাসন্তানের জন্ম হোক, সেখানে এমন দৃশ্য সত্যিই অবাক করে। বছরের পর বছর এমনই অবাক করা দৃশ্যের জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন ডাঃ গণেশ রাখ (Dr. Ganesh Rakh)। দেশের লিঙ্গবৈষম্যের বাতাবরণকে বদলাতে এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। কোনো কন্যাসন্তানের জন্মের সময় সেই শিশুর বাবা-মায়ের কাছ থেকে হাসপাতালের কোনো খরচই নেন না তিনি। ২০১২ সাল থেকে এভাবে বিনামূল্যে অন্তত ২০০০ শিশুর প্রসব করিয়েছেন তিনি।
অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন ডাঃ গণেশ রাখ। বাবা ছিলেন রেলস্টেশনের কুলি। সেখান থেকে পরিশ্রম করে ডাক্তার হয়ে উঠেছেন তিনি। তবে ডাক্তারি জীবনের শুরুতেই তিনি লক্ষ করেন, বহু সময় রোগীর পরিবার হাসপাতালের খরচ মেটাতে চান না। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় তিনি মনে করতেন অর্থনৈতিক কারণেই এমন প্রবণতা দেখা যায়। তবে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি প্রসূতি বিভাগে। আর সেখানে কন্যাসন্তানের জন্ম হলেই তার পরিবার অশান্তি শুরু করে। হাসপাতালের খরচ না মেটানো অতি তুচ্ছ ঘটনা। অনেক সময় সদ্যজাত শিশুটির মা তাকে স্পর্শও করে না। পরিবারের বাকিরাও এমন হতাশা ব্যক্ত করেন, যেন পরিবারের কেউ মারা গিয়েছেন। সমস্যাটা বুঝতে সমস্যা হয় না ডাঃ রাখের। এভাবেই তাঁর মাথায় আসে অভিনব এই পরিকল্পনার কথা। ‘কন্যা মানেই লক্ষ্মী’ – এই ধারণা থেকেই এমন পরিকল্পনা মাথায় আসে তাঁর।
২০১২ সালেই বিনামূল্যে ১৩০ জন শিশুকন্যার প্রসব করেন ডাঃ রাখ। এরপর বছরের পর বছর সংখ্যাটা বাড়তেই থাকে। শুধু তাই নয়, ডাঃ রাখের আবেদনে সাড়া দিয়ে বিশ্বের অন্তত ৪ হাজার চিকিৎসক এগিয়ে এসেছেন। প্রত্যেকেই যে বিনামূল্যে প্রসব করেন, এমন নয়। তবে অনেকেই চিকিৎসার খরচে কিছুটা ছাড় দেন, অথবা অন্য নানাভাবে উদ্যোগ নেন। প্রত্যেকের লক্ষ্য একটাই, কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়া যে দুর্ভাগ্য নয়, এই কথাটাই প্রমাণ করা।
আজও ভারতে প্রতি বছর কন্যাভ্রূণ হত্যার সংখ্যা অবাক করে। ক্রমশ লিঙ্গ-অনুপাতও কমছে। বর্তমানে ভারতে ১০০০ পুরুষের সাপেক্ষে নারীর সংখ্যা ৮৯৯। চিনের পর ভারতেই এই অনুপাত সবচেয়ে কম। তবুও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ডাঃ রাখের মতো মানুষরা। তাঁদের এই ঐকান্তিক চেষ্টা একদিন নিশ্চই দৃশ্যটা বদলে দেবে।
আরও পড়ুন
প্রেমে ব্যর্থ, তবু প্রেমিকার মৃতদেহ আঁকড়েই জীবন কাটিয়েছেন জার্মান চিকিৎসক
Powered by Froala Editor