মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ কিংবা বেঙ্গালুরুর মতোই দক্ষিণ ভারতের অন্যতম ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব’ হয়ে উঠেছে মহারাষ্ট্রের পুনে শহর। বিগত দু’দশকে এক লাফে বেড়েছে জনসংখ্যা। সেইসঙ্গে গোটা পুনে শহরজুড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বহুতল, মাল্টিপ্লেক্স। এই উন্নয়ন যে গোটা অঞ্চলের অর্থনীতিকে বদলে দিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। কিন্তু বাসস্থান হারিয়েছে হাজার হাজার পাখি। ইট-পাথর-কংক্রিটের এই কৃত্রিম জঙ্গলে তাদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিয়েছেন পুনের তরুণ ডিজাইনার।
স্মিতা পাসালকার (Smita Pasalkar)। অবশ্য স্থানীয়দের কাছে তিনি পরিচিত ‘বার্ড-উইম্যান’ (Bird Woman) নামে। বছর ছয়েক আগের কথা। ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর পুনেতে (Pune) চন্দননগর (Chandan Nagar) এলাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্টে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন স্মিতা। শুরু করেছিলেন নিজের ডিজাইনিং ফার্ম। নতুন বাড়ি, প্রতিবেশী পছন্দ হয়েছিল সবই। তবে তাঁকে অবাক করত ভোরের নিস্তব্ধতা। ছোটোবেলায় মফঃস্বলে বেড়ে ওঠা স্মিতার। পাখির ডাকেই যে ঘুম ভাঙত তাঁর। ফলে, এই যান্ত্রিক নীরবতা একপ্রকার অসহ্য হয়ে উঠেছিল তাঁর কাছে। সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁর এই লড়াই।
নির্মাণ প্রকল্পের বাড়বাড়ন্ত আর অরণ্যের অভাবেই যে দেশান্তরে গিয়েছে পাখিরা, তা বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি স্মিতার। ফ্ল্যাটের ছোট্ট বারান্দাকেই তাই বাগানে বদলে ফেলেন তিনি। টবে রোপণ করেন ছোটো গুল্ম ও লতা জাতীয় গাছ। তাছাড়াও নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে বাঁশ দিয়ে তৈরি করে ফেলেন একাধিক পাখির বাসা এবং ফিডার।
না, একদিনে বদলায়নি পরিস্থিতি। তবে মাস খানেকের মধ্যেই আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছিল পাখিদের। আজ প্রতিদিন প্রায় কয়েকশো পাখি উড়ে আসে তাঁর এই ঝুলন্ত-বাগানে। চড়াই, কাক, সানবার্ড, ময়নার পাশাপাশি সেই তালিকায় রয়েছে বিরল প্রজাতির টিয়াও। স্থানীয়দের কথায়, শেষ দু’দশকে এমন টিয়া নাকি দেখাই যায়নি পুনেতে। তবে এখানেই শেষ নয়। পাকি ছাড়াও কাঠবিড়ালীরা খাবারের সন্ধানে এসে হাজির হয় স্মিতার ব্যালকনিতে।
বাড়ি এবং কর্মক্ষেত্রে কাজ সামলেও প্রতিদিন পাখিদের জন্য অন্ততপক্ষে ২ ঘণ্টা সময় বরাদ্দ করে রাখেন স্মিতা। প্রতি মাসে তাদের জন্য কেনা হয় প্রায় ৫০ কেজি চাল। সবমিলিয়ে তাঁর সৌজন্যেই যেন নতুন করে হারানো আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে পাখিরা। স্মিতার বিশ্বাস, শুধু কার্বন নির্গমন কমিয়েই পরিবেশ বাঁচানো সম্ভব নয়। তার জন্য প্রয়োজন বাস্তুতন্ত্রের রক্ষা করাও। সেই লক্ষেই এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তরুণ ডিজাইনার…
ছবি : ফেসবুক
Powered by Froala Editor