করোনা আবহে প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছে মণ্ডপে। কিন্তু তাবলে কী প্রতিমা দর্শন না করেই পুজো কাটিয়ে ফেলা যায়? অগত্যা ভরসা ভার্চুয়াল মিডিয়াই। আজ থাকল দক্ষিণ কলকাতার বিখ্যাত পুজোগুলির প্রতিমা।

কেষ্টপুর বালকবৃন্দ এবারে এশিয়ান পেইন্টস শারদ সম্মানে শর্ট লিস্টেড হয়েছে। গোটা মণ্ডপটি সেজে উঠেছে গাছের বিভিন্ন অংশ দিয়ে। বিষয় পরিকল্পনায় রয়েছেন পূর্ণেন্দু দে এবং প্রতিমাশিল্পী অরূপ কর। মূর্তিটি তৈরি হয়েছে একটি গাছের আদলে। সন্ধের পর আলোকসজ্জায় সেজে উঠল এক অভিনব আবহ তৈরি করছে এই মণ্ডপ।

মাস্টারদা স্মৃতি সংঘ এবারে এশিয়ান পেইন্টস শারদ সম্মানের 'বছরের সেরা বিস্ময়' শিরোপা পেয়েছে। মণ্ডপ তৈরি হয়েছে পটের ছবি দিয়ে। একটি গ্রাম বাংলার পরিবেশ এবং তার মধ্যে পটচিত্রের ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠেছে এক অভিনব আবহ। এই মন্ডপের থিম শিল্পী মানস রায় এবং প্রতিমা নির্মাণে রয়েছেন সনাতন পাল।

অর্জুনপুর আমরা সবাই ক্লাব এর এবারের শিল্পী সৌমিক এবং পিয়ালী সাধুখাঁ। প্রতিমা নির্মাণে রয়েছেন সুব্রত মৃধা। এবারের বিষয় হলো 'কালচক্র'। মূল মূর্তিটির পেছনে রয়েছে একটি বিরাট গোলাকার স্ক্রিন । সৃষ্টি এবং প্রলয়, সময়ের প্রতিটি পর্বে ঘটে যাওয়া এই বিবর্তনকে যেন তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপে। দেবী যেন কালচক্রকে একা হাতে নিয়ন্ত্রণ করছেন।

দমদম তরুণ দলের এবারের বিষয় "উমাবাটী"। শিল্পী দেবতোষ কর। সমগ্র মণ্ডপটি তৈরি হয়েছে ঘরের বাঁধন দিয়ে। একেবারেই দেবী শীতলা থানের মতো করে তৈরি করা হয়েছে মন্ডপ। যেহেতু দেবী শীতলা মহামারী নিবারণ করেন, তাই এই মহামারীর আকালের সময়ে মাতৃমূর্তি নির্মিত হয়েছে দেবী শীতলার আদলে। দেবীমূর্তির ঠিক বিপরীতে রয়েছে একটি দর্পণ যেখানে মাতৃমূর্তির প্রতিফলন দেখা যায়।

বেশ রঙিন সাজে সেজে উঠেছে দমদম পার্ক ভারতচক্রের মণ্ডপ। এই মণ্ডপের মধ্যে কতগুলি অংশ রয়েছে। মণ্ডপের একেবারে সামনে রয়েছে একটি বিড়ালের ইনস্টলেশন, তারপরেই একটি রিক্সা এবং কেটলি। শিল্পী অনির্বাণ দাস এই বিষয়টির নাম দিয়েছেন 'দুখজাগানিয়া'। মাতৃ প্রতিমা একচালার এবং প্রতিমা শিল্পী হলেন সৌমেন পাল। মণ্ডপ শয্যায় ব্যবহৃত হয়েছে মাটির ভাঁড় এবং সাইকেলের চাকা।।

দমদম পার্ক সর্বজনীন এবারের বিষয় 'বিনির্মাণ'। বিভিন্ন রকম কাঠের কাঠামো দিয়ে তৈরি হয়েছে এই মণ্ডপ। প্রধানত কাট এবং উল বা সুতোর কাজ রয়েছে এখানে। শিল্পী কৃশানু পাল সমগ্র মণ্ডপটিকে একটি বিনির্মাণ ঘটা অঞ্চলের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছেন। প্রতিমা নির্মাণও করেছেন তিনি।

এই মণ্ডপটি নির্মাণ করেছেন শিল্পী পরিমল পাল। তিনি প্রধানত প্রতিমা শিল্পী হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে এই থিম পরিকল্পনার কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। মূল মণ্ডপের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বেশকিছু অভিনব চিত্রকল্প। গ্রিক মূর্তি এবং একটি বিরাট রোমান হরফের সংখ্যা চিহ্নিত ঘড়ি রয়েছে প্রতিমার সামনে। বিভিন্ন অঙ্কিত চিত্র দিয়ে তৈরি হয়েছে এই মণ্ডপ।

টালা বারোয়ারির এবারের বিষয় 'শান্তি'। এবছর ১০০ বছরে পদার্পণ করল টালা বারোয়ারি। তাই পুজোর জৌলুসও অনেকটাই বেশি। বৌদ্ধযুগের স্থাপত্যের সঙ্গে মিল রয়েছে এই মণ্ডপের। তবে মূল প্রতিমার গর্ভগৃহটি তৈরি হয়েছে ইসরো প্রেরিত ' মহাকাশযানের আকারে। সামনে রয়েছে শান্তির প্রতীক 'পায়রা'।

শিল্পী সুশান্ত পালের ভাবনায় গড়ে উঠেছে সমগ্র মণ্ডপ। গতবছর টালা পার্ক প্রত্যয়ের ভাবনা ছিল 'কল্পলোক', আর এ বছর ঠিক তার বিপরীত অর্থাৎ 'লোকহিত'। সমগ্র মণ্ডপটিতে রয়েছে একটি ক্ষুদ্র প্রতিমা, যেটি কাঁচের একটি বাক্সের মধ্যে আবদ্ধ।এটি হল মনের মধ্যে সুরক্ষিত দেবী ভাবনা। আর সেই মুহূর্তের পেছনে প্রজেকশনে দেখানো হয়েছে মূর্তিটিরই প্রবর্ধিত চিত্র, যেটি ক্রমাগত ভেঙে যাচ্ছে আবার জোড়া লাগছে, যা মানুষের বিক্ষিপ্ত চেতনায় দেবী কল্পনার রূপ।

বেলগাছিয়া সাধারণ দুর্গোৎসবে বেশ অভিনব কাজ করেছেন শিল্পী সোমনাথ দলুই। এবছরের বিষয় হল আবদ্ধ। এই লকডাউনে ঘরে আবদ্ধ মানুষের জীবনযাত্রাকে একটি পরাবাস্তব দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখিয়েছেন শিল্পী। মানুষের ঘরে যা যা থাকে, সেই সমস্ত উপকরণই এখানে রয়েছে তবে উল্টো অবস্থানে। সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন রকম কাপড়ের টেক্সচার।