এ-বছর প্রতিটি দুর্গোৎসব কমিটিকেই ৫০ হাজার টাকার অনুদান দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেক ক্লাবই সেই টাকায় ঢেলে মণ্ডপ সাজিয়েছে। কোথাও বা পরের বছরের জন্য তহবিলে সঞ্চিত হয়েছে এই আর্থিক অনুদান। তবে বরানগরের নেতাজি কলোনি লোল্যান্ড দুর্গা পুজোয় দেখা গেল অন্য উদ্যোগ। অনুদানের পুরো টাকাটাই তুলে দেওয়া হল থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত এক শিশুর চিকিৎসার জন্য। করোনা আবহে এমনই মানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল বাংলা।
আর্থিক অনটন তো ছিলই পরিবারে। তার ওপরে মাস গেলে চিকিৎসার জন্য বিপুল অঙ্কের টাকার ভারবহন। অসুস্থতার স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল অস্থিমজ্জার প্রতিস্থাপন। খরচ তো নেহাত কম নয়। বছর সাতেকের দীপক শাসমলের চিকিৎসার জন্য শেষ অবধি এগিয়ে এল পুজো কমিটিই।
পুজো কমিটির মুখ্য সংগঠক দিলীপ নারায়ণ বসু জানালেন, “আমাদেরই পাড়ার বাসিন্দা শিশুটি। বাবা স্থানীয় একটি সোনার দোকানের কর্মচারী। আর্থিকভাবে একেবারেই স্বচ্ছল নয় পরিবার। সেদিক থেকেই পুজো কমিটির এই উদ্যোগ। এছাড়াও কমিটির সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবেও প্রত্যেকে সাহায্য করেছেন ওই পরিবারকে। তবে এই অস্ত্রোপচার যথেষ্ট খরচ সাপেক্ষ। তাই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আরও কিছু অনুদান ওঁদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য।”
তবে শুধুমাত্র বছর সাতেকের দীপক শাসমলের চিকিৎসাই নয়। এছাড়াও একাধিক সমাজসেবামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ব্যবস্থা করা হয়েছে ২০ হাজার মাস্কের। কোনো দর্শক মাস্ক ছাড়া এলে তাঁদের মাস্ক প্রদান করবে পুজো কমিটি। এছাড়াও দ্বিতীয়া থেকে শুরু করে ষষ্ঠী অবধি প্রতিদিন ২০০ জন দরিদ্রের হাতে শাড়ি, খাদ্যদ্রব্য, মাস্ক এবং স্যানিটাইজার তুলে দিচ্ছেন সদস্যরা। আয়োজন করা হয়েছিল রক্তদান শিবিরেরও। তবে দূরত্ববিধির কথা মাথায় রেখেই সেই উদ্যোগ দুদিনের সূচিতে ভাগ করে নিয়েছিল কমিটি।
খুব স্বাভাবিকভাবেই বিস্ময় জাগতে পারে, কোথা থেকে আসছে এই বিপুল আর্থিক অনুদান? বিষয়টা পরিষ্কার করে দিলেন দিলীপবাবু, “করোনা পরিস্থিতির কারণে আমাদের পুজোর বাজেট এবার অনেক কম। প্রায় ৭৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আক্ষরিক অর্থে একই আছে আমাদের বাজেট। পুজোর খরচ থেকে কমিয়ে সেই টাকা দিয়েই মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছি আমরা।”
আরও পড়ুন
প্রতিটা পুজোমণ্ডপ ‘কন্টেন্টমেন্ট জোন’, দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ, নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের
বাংলার বিখ্যাত পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম নাম নেতাজি কলোনি। বেশ জাঁকজমক করেই হয় এই পুজো। কার্নিভালের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাতেও দেখা যায় তাদের। তবে এবছর একেবারেই ‘অন্যরকম’ পুজো হচ্ছে বরানগরে। যেখানে প্রতিমা নয়, বরং দরিদ্ররাই নারায়ণ হিসাবে পূজিত হচ্ছেন। মহামারীর এ কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে যেন আশ্বাস দিচ্ছে বরানগরের ৭২ বছরের পুরনো এই দুর্গোৎসব...
Powered by Froala Editor